ভালোবাসা কারে কয়?

আক্ষরিক অর্থে বলতে গেলে, নর-নারীর মধ্যে যখন সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ ও পরস্পর শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক থাকে, যার প্রতি নির্ভর করা যায় নিশ্চিন্তে, পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, দুজন দুজনকে আঁকড়ে থাকতে চায়, একে অন্যের জন্য প্রতীক্ষা করে, দেখার আকুতি থাকে, কাছে পাওয়ার আনন্দে পাগল হয়ে যায়, দুজনে দুজনাতে মুগ্ধ…এরই নাম প্রেম বা ভালোবাসা। যে অনুভূতির জন্য সব সুখ, শান্তি, ঐশ্বর্য, পরিচিতি, সমাজ, সংসার সব ত্যাগ করা যায়। সম্মান-অসম্মানের পরোয়া থাকে না। আবার দুজনার মধ্যে যদি কখনো ভুল-বোঝাবুঝি হয় বা দূরে থাকতে হয়, তখন খুব কষ্ট হয়। বিরহ ছাড়া ভালোবাসা অনুভব করা যায় না। মনে হয় যেন তাকে ছাড়া আর বাঁচব না। এই যন্ত্রণার নামই ‘ভালোবাসা’! বুকের মধ্যে আগুন জ্বলতে থাকে। যে কখনো এই যাতনা সয়নি, সে ভালোবাসার মর্ম বোঝেনি।
তাই তো রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
“সখী, ভালোবাসা কারে কয়!
সে কি কেবলি যাতনাময়।”

যে ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকে না,সীমা থাকে না সেই ভালোবাসা হচ্ছে সত্যিকারের ভালোবাসা।যেমন সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা।সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো কারো কাছে মাথা নত করে না। হাজার কষ্ট হলেও তারা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না।যত কষ্টই হোক না কেন সে তার ভালোবাসাকে আপন করে নিবেই,এবং তার এ ভালোবাসার জন্য যে কোনো ত্যাগ শিকার করবে। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা।বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়।আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়,বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিস্কাম ভালোবাসা।আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে, যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় সময় খুবই আনন্দদায়ক হতে পারে,আর অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা।

সত্যিকারের ভালোবাসা হলো তাই, যে ভালোবাসা আপনাকে দুরে যেতে দিবে না, কিন্তু কাছে থাকলে ছোট ছোট ঝগড়া, দুষ্টুমি, খুঁনসুটি চলতেই থাকবে।আসলে পূর্ণাঙ্গ ভাবে আমি ভালোবাসার মানে জানিনা। তবে ভালোবাসা মানে মনে হয় এরকমই, কাউকে দেখে ভালো লাগা,কাউকে মন থেকে বিশ্বাস করা,তাকে না দেখলে ভীষন কষ্ট পাওয়া,তাকে এক নজর দেখার জন্য মন ছট ফট করে আবার দেখা হলে মুখে কথা আটকে যায়,তার জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে,তার কষ্টে নিজের কষ্ট হয়,এরই নামই মনে হয় ভালোবাসা। ভালোবাসা মানে ফিলিংস, অপ্রকাশ্য অনুভূতি। কেউ বলে ভালোবাসা সীমাহীন তাই একে ভাঙ্গা যাবেনা এক শব্দে,এটা হচ্ছে উপলব্ধির ব্যাপার।খুবই আচার্য লাগে যখন দেখি এই ভালোবাসার জন্য কেউ তার ফ্যামিলি ত্যাগ করে,বন্ধুদের ত্যাগ করে। ভাললাগে এই কারণে যে ভালোবাসার শক্তি আসলে অপরিসীম। তা না হলে সবচেয়ে কাছের মানুষদের কিভাবে ত্যাগ করা যায় শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণে? প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা আমার কাছে কিছুটা আজব মনে হয়। একজনের প্রতি ভাললাগা আসতেই পারে কিন্তু তার জন্য আমার সারাটা দিন ব্যয় করা, তার সাথে ভালোবাসার ফিলিংস শেয়ার করা, রাত জেগে মোবাইলে কথা বলা, ছুটির দিনে ঘুরতে বের হওয়া ইত্যাদি এসব কনসেপ্ট আমার ভাল লাগেনা। সবচেয়ে যে ব্যাপারটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা হল অন্যের প্রতি আমার ফিলিংস কিভাবে আসিতেছে? আমি কি তার ক্যারিয়ার,স্মার্টনেস, আউটলুক দেখে ভালোবাসার প্রতি আকর্ষি হচ্ছি? নাকি অন্য কিছু? যদিও যারা প্রেম করে তাদের কাছে এই প্রশ্ন করলে তারা বলে, ওর মনটা অনেক ভাল, তাই ওকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু তাদের প্রেমে পড়ার কাহিনী শুনলে দেখে যায় তারা কখনও মন দেখে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। তাদের প্রেমে পড়ার ইতিহাস থেকে দেখা যায় কেউ কোন অনুষ্ঠানে গিয়েছে সেখানে প্রথম দেখাতেই প্রেম। কিংবা একই সাথে লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করে সেই থেকেই প্রেম। কিংবা আননোন মোবাইল থেকে ম্যাসেজ/ভয়েস শুনে প্রেম। এভাবেই সাধারণত আজকের যুগে ভালোবাসা শুরু হয়। সেখানে দুইজন মানুষের আদর্শিক মিল খুব কমই হয়। তাই প্রেমিক-প্রেমিকার মন কষা-কষি লেগেই থাকে। পরে অবশ্য তারা বলে যে এই মন কষাকষি নাকি তাদের ভালোবাসার ফিলিংস আরো বাড়িয়ে দেয়। আসলেই কি? মনের অজান্তে যে ভালোবাসা হয় সে ভালোবাসা সত্যিকারের ভালোবাসা শরীর ও সম্পদ দেখে ভালোবাসা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
স্বভাবগতভাবেই মানুষ ভালোবাসার পাগল,কেউ ভালোবাসে নিজেকে,কেউবা অপরজনকে,কখনো প্রেম করে প্রকৃতির সাথে, কখনো বা প্রিয়জনের সাথে। এই দুনিয়ার প্রতি টান কমাতে পারলে তখন সে প্রেম করে তার সৃষ্টিকর্তা-বিধাতার সাথে। শুভ উদ্দেশ্যে সৎ ভালোবাসা মানুষকে সাহায্য করে নিজেকে আরো পরিনত সুন্দর করে গড়ে তুলতে। সুতরাং মানুষের জীবনের জন্য প্রেম আসলেই প্রয়োজন। প্রেম হলো মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশের মূল উৎস। প্রেম ও ভালোবাসার মাধ্যমেই প্রতিটি সৃষ্টি বিকাশ লাভ করে। একারনেই প্রেম মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ন। ভালোবাসা বা প্রেম ছাড়া পৃথিবী এত সৃষ্টিশীল হতো না। তার সবচেয়ে বড় উদাহরন সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিটি সৃষ্টিকে অগাধ ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, এই কারনেই তার সৃষ্টি এত সুন্দর। ভালোবাসার ধর্ম একটাই। দুজন মানুষকে অদৃশ্য বন্ধনে জড়িয়ে রাখা। এ বন্ধন ছিন্ন হওয়ার নয়। প্রকৃত ভালোবাসার বাইরে কিছু থাকলে সেটি ছলনা, প্রতারণা কিংবা অবিশ্বাস। ভালোবাসার স্বরূপ একটিই, যেটি আমাদের মনকে পবিত্র করে দেয়। ভালোবাসার মধ্যে যতটুকু অবিশ্বাস কিংবা পঙ্কিলতা প্রবেশ করবে, ততটুকুই সেটি ভালোবাসা থেকে দূরে সরে যাবে বা যায়। তখন সেটিকে আর ভালোবাসা বলে অভিহিত করার যৌক্তিকতা থাকে না। যেটি সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসা, সেটি স্বর্গ থেকেই আসে, আবার স্বর্গেই চলে যায়। বর্তমান পেক্ষাপটে সর্গিয় প্রেম অবহেলায়,অনাদরে নির্মম পরিহাসে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নির্জম দ্বীপে রয়, আরসেই সর্গিয় প্রেম হারিয়ে গেলে বলি-

কত বেশী ভালোবাসি আমি তোমাকে,
যেদিন পূথিবী ছেরে চলে যাব
বুঝবে সেদিন তুমি আমাকে,
তোমার আখির অগোচরে-আমি চলে যাব যেদিন,
সেদিন তুমি আমাকে শুধু ভালোবাসবে।
বিধাতা নিজের হস্তে আমার জন্য
সুন্দর করে বানিয়েছে তোমাকে,
সর্গথেকে পাঠিয়েছে পূথিবীতে
মনে হয় বুকের ভিতরে ছিলে লক্ষ জনমে,
বুঝবে যেদিন তুমি
পাগলের মতো ভালোবাসবে শুধু আমাকে।
দিল্লির সম্রাট শাহাজান,প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের জন্য
ভালোবাসার চিহ্নের জন্য গড়েছিলে তাজমহল,
সে কতনা পারে ভালোবাসার মমতাজ হতে।
মনের গহিনে লেখা যায় যার নাম
কারো সাদ্ধ হয়না মুছে দেয়া তার নাম,
পূথিবীতে ভালোবেসেছে যে জন-অশ্রæশিক্ত জ্বলে ভাসছে সেজন,
বুঝবে যেদিন তুমি আমাকে-সেদিন পাগলের মতো
ভালোবাসবে শুধু আমাকে।

একটা সময় ছিল যখন প্রেমিক-প্রেমিকার দেয়া আঘাত সহ্য করেও প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের ভালোবেসে যেত। কিন্তু এখন এমনটি খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। এখন প্রেমিক-প্রেমিকা আঘাত সহ্য করার পরিবর্তে প্রতিশোধ নিতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এতেই ক্ষয়ে যেতে থাকে ভালোবাসার মহানুভবতা, ভালোবাসার উদারতা। আজকাল ভালোবাসার মধ্যে কোন বিশ্বাস নাই। তাই তো একে অপরের প্রতি সন্দিহান সর্বদা। কোথায় গেল, কি করল, কার সাথে মোবাইলে কথা বলল, কার সাথে কলেজে মেলামেশা করলো ইত্যাদি হাজারো রকম সন্দেহ। যদি বিশ্বাস অর্জন করা না যায় তাহলে একে অপরের প্রতি কখনো শ্রদ্ধা আসেনা। তাই আজকাল ভালোবাসা খুব সংকীর্ণ হয়ে গেছে। ভালোবাসা মানেই কেবল ঘোরাঘুরি, রাত জেগে কথা, চ্যাটিং, সন্দেহ আর মন কষা-কষি। আজকাল ছেলে-মেয়েদের অবসর সময় কাটে লাভারের সাথে গল্প করে, আড্ডা দিয়ে। ভালোবাসার মানে যে কেবল এগুলো নয় এটা তাদের চিন্তায় ঢুকেনা। ভালোবাসার মানুষের সাথে গল্প করার বিষয় কেবল কখন কি করল,কি দিয়ে খাইল, কে কাকে কতটুকু ভালোবাসে ইত্যাদি। দশ মাস দশ দিন সুগভীর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে শিশুটি যখন নিরাপত্তাহীন পৃথিবীতে পদার্পন করে তখন তার একমাত্র নিরাপত্তা তার মা। সেই নিরাপত্তার স্থানও আজ নিরাপত্তাবিহীন।
তাই ভালোবাসাকে আমি কয়েকটা ভাগ করলাম—-
প্রথমতঃ, এই প্রেম খুব শক্ত হয়। এই প্রেম কারো মনে আসলে সে ওই ব্যক্তিকে ছাড়া আর কাউকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু এই প্রেমের একটি সমস্যা হল এর প্রকাশ খুব কম,কারণ এটাকে সত্যিকারের প্রেম বলে। আর কবি গুরু বলেছেন “যার ভালবাসা যত গভীর, প্রকাশ করার ক্ষমতা তার তত কম”। এই প্রেম যার মনে একবার বাসা বেঁধেছে সে অই ব্যক্তিকে না পেলে চিরকুমার থাকার মতও ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। কারণ সে মনের মধ্যে তাকে এমন শক্ত করে আকড়ে ধরে সেখানে অন্য কোন স্থান দেয়া দুষ্কর হয়। শত কষ্টের মাঝেও দুজন-দুজনকে ছাড়ে না,তখন অভাব ঘরের দরজায় দাড়ায় না, চারিদিক গ্রাস করলেও ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায় না। এটাকে বলে সত্যিকারের প্রেম। এই প্রেমে রাগ অভিমান ইত্যাদি বেশি থাকলেও ভাঙ্গন খুব কম। একান্ত কারণ ছাড়া এই প্রেম ভাঙ্গবে না।
আবার, এই প্রেম বা ভালোবাসার কোন ভিত্তি নেই। এই ভালোবাসা তরলের মতই যেই পাত্রে স্থান পায় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে,মানে যেখানে সে তার প্রতি অন্যকারো দুর্বলতা বুঝতে পারে সেই মনে সে তাকে সপে দেয়। মানেভালোবাসি ভালোবাসি বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলে ফেললেও কখনো টেকসই হয় না। কারণ এই ভালোবাসা বিভিন্ন মানুষকে তার মন দান করে থাকে,তার চোখে সবাইকে ভাল লাগে। আলাদা করে কাউকে সে নিতে পারে না।
আবার, এই প্রকার ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করে না। বায়ু যেমন অদৃশ্য থেকে সব কিছুকে দোলা দিয়ে যায়, ঠিক তেমনি এই ভালোবাসা মনের মধ্যে থাকে নিজেকে নিজে দোলা দিয়ে যায়। প্রকাশ না করার কারণে কখনো কখনো মনের মানুষটাকে কোনদিন বলাই হয় না। আর না বলার কারণে ঘর বাঁধার স্বপ্নও আসে না। এই ভালবাসায় তার ভালবাসার মানুষটিকে অন্যের সাথে দেখলে রাগ করবে অভিমান করবে কাঁদবে কিন্তু কখনো প্রকাশ করবে না। সে চায় তার ভঙ্গিমাতে অপরপক্ষ্য বুঝে নিক যে তাকে সে ভালোবাসে।

কারো কারো মতে‘এটি একটি আবেগ যার কারণে আমাদের কাউকে ভালোলাগে।’আবার কারো মতে, ‘কাউকে মন থেকে স্নেহ, মায়া, মমতা দেয়াই ভালোবাসা।’ অনেকের মতে, ‘ভালোবাসা হচ্ছে সিগারেটের মত, যার পরিণাম হচ্ছে পোড়াছাই।’ অনেকে কাউকে দেখে পছন্দ হলে বলে ফেলেন, ‘আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।’গত কয়েকদিন আগে এক বন্ধু আমাকে বলল বন্ধু ওই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি। ওকে আমি প্রোপজ করবো,কিভাবে বলব আমাকে বল। কিন্তু আমার জানা মতে সেই ছেলেটি একসাথে কয়েকটি মেয়ের সাথে প্রেম করে। আসলে এটা ঠিক নয়। এটা ভালোবাসা নয়। এটা হচ্ছে ভালোলাগা। আবেগ,যেটি আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়,স্বপ্ন দেখতে শেখায়,ত্যাগ-তিতীক্ষা-ধৈর্য্য শেখায়। ভালোবাসা শুধুমাত্র প্রণয় থেকে হয় না। ভালোবাসা স্নেহ, মায়া, মমতা থেকেও আসে। একটি শিশুর জন্ম হলে মা তাকে লালন পালন করে। শিশুটি সময়ে অসময়ে জ্বালাতন করে – কাঁদে, ঠিকমত ঘুমায় না, খায় না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এতকিছুর পরও যে কারণে মা তার সন্তানটিকে ফেলে রেখে যেতে পারে না তা হল – ভালোবাসা। সত্যিকারের ভালোবাসা আসে ভক্তি,শ্রদ্ধা,সম্মান থেকে।যেমন: আমরা আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদীকে শ্রদ্ধাভরে ভালবাসি।প্রণয় অর্থেই হোক, আর মায়া-মমতা-সম্মান অর্থেই হোক, ভালবাসা মানে হলো কারো ভাল চাওয়া। প্রণয়ের দিক থেকে ভালোবাসাকে চিন্তা করলে দেখা যায় – যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে তখন তারা একে অপরের ব্যাপারে পছন্দ করে।একজন আরেকজনের ব্যাপারে ছোটখাট বিষয় নিয়েও মাথা ঘামায়। একজন আরেকজনের ক্ষতি দেখতে পারে না বরং সবসময় তার ভাল চিন্তা করে। একজন আরেকজনকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।একে অপরকে সবসময় দেখতে ইচ্ছে করে, একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মনের ভিতর আগলে রাখতে ইচ্ছে করে।একজন আরেকজনকে দেখলে বুকের ভেতরে একটা শান্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একজন আরেকজনের দিকে তাকালে মনে হয় যেন, ‘দুচোখ ভরে দেখি।’ ভালোবাসা মানে শুধু আপন করে পাওয়া নয়, একে অপরের প্রতি অধিকার সৃষ্টি ভালোবাসার অন্যতম আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ত্যাগ স্বীকার করা।ভালোবাসার মানুষটির জন্য অনেক সুবিধা ছেড়ে দেয়া বরং অনেকটা আনন্দের বিষয় হয়ে থাকে। ভালোবাসা দেখানোর প্রয়োজন হয় না, ভালোবাসা এমনিতেই প্রকাশ পায়। ভালোবাসার জন্য তাড়াহুড়া করা উচিৎ নয়। চাইলেই কাউকে ভালোবাসা যায় না।জোড় করে কাউকে ভালোবাসা যায় না।এজন্য মনের ভেতর থেকে অনুভূতি তৈরি হওয়া প্রয়োজন। ভালোবাসা হল এক লিঙ্গ তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মনের মধ্যে যে টান অনুভব করে এবং তার অনুপস্থিতিতে সে তার অস্তিত্ব টের পায় এবং যে এক অদৃশ্য শরীর তার মনকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে,এই যে অনুভতি তাকেই বলে প্রেম ও ভালোবাসা।

যে ভালোবাসে, সে প্রথমেই সম্মান করে। প্রেয়সীকে দেবীর আসনে বসিয়ে পুজো করে। অন্যকোনও মহিলার দিকে তার নজর যায় না। প্রেয়সী যেমনই হোক, তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। আগামীদিনের স্বপ্ন দেখে। বিয়ে করে সংসার করার স্বপ্ন দেখে। ফলত, শুরু থেকেই প্রেয়সী একপ্রকার স্ত্রীর মর্যাদা পায়। প্রেম করব, লোককে দেখাব, বাহবা কুড়াবো – এই মানসিকতা থাকে না। মানুষমাত্রেই ভুল হয়। কিন্তু সেই ভুল যে ক্ষমা করে দেয় তার মন বড়। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেও ভুল হয়। অশান্তি হয়। যে ভালোবাসে, সে সব দোষ মেনে নিতে পারে। ক্ষমাও করে দিতে পারে অনায়াসে। স্বাধীনতা -যে ভালোবাসে সে ভালো কোনও কাজে বাধা দেয় না। প্রকৃত প্রেমের গোড়ায় থাকে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আগাগোড়া প্রেমকে সমৃদ্ধ করে। সেই বন্ধুত্বের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে ভালো পরামর্শদাতা। অনেকের ধারণা প্রেম না থাকলে সমঝোতা করে মানুষ। কিন্তু প্রেমের সম্পর্কেও সমঝোতা ব্যাপারটা চলে আসে। সমঝোতা হতে হবে দু’তরফের। সেটা কখনওই একতরফা হতে পারে না। একজন দু’পা এগোলে অন্যজন দু’পা পিছাবে। এরকমভাবেই চলবে সম্পর্ক।

ব্রেকআপের বড় একটি কারণ হলো প্রতারণা। একজন বিশ্বস্ত, অপরজন প্রেম করে বেড়াচ্ছে তার অজান্তে এই ঘটনাগুলো অকল্পনীয় ফাটল ধরায় সম্পর্কে। প্রতারণা হলো সেটাই, যেটা আপনাদের সম্পর্কের সীমা লঙ্ঘন করে এবং বিশ্বস্ততা ভাঙ্গে। দুঃখের ব্যাপার হলো, আপনি যতটা তাকে নিয়ে ভাবছেন, তার চাইতেও অনেক বেশি দেখা যায়। সবার আগে তারা নিজের স্বার্থ দেখেন এবং নিজেদেরকে ভালোবাসেন অন্য সবার চাইতে বেশি। তারা প্রমাণ করতে চায় তারা ভালোবাসার জন্য কতটা যোগ্য। একজন মানুষের ভালোবাসা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। তারা চায় সবার থেকে ভালোবাসা পেতে।এমনকি তা করতে গিয়ে প্রতারণা করাটাও তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়। বিশেষ করে আরো ভালো কোনো সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা সবসময় তাদের মাথায় থাকে। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ: আমাদের সবারই এমন কিছু সময় আসে যখন আমরা নিজেদের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। সেটা না। এ ব্যাপারটা খুবই ভয়ংকর। কোনো কারণে দুজনের মাঝে দুরত্ব তৈরি হলেই প্রতারণা করার প্রবণতা বাড়তে দেখা যায় এসব মানুষের ক্ষেত্রে। মনের গভীরে প্রেম বিশ্বাস হারিয়ে,মনের মানুষের ছলনায় জ্বরজড়িত হয়ে,বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে র্দীঘশ্বাস ছেড়ে বলি-
আমায় এত কস্ট দিলি বন্ধুরে
আমি তোর প্রেমে পাগল
মন জানে আর কেউ জানে না ।
ও সাথিরে তোমায় আমি পাবো বলে
কত স্বপ্ন দেখেছি দিবানিসি ধরে
তুমি আমারে দিলি এমন যন্ত্রনা,
তিরের আঘাতের মতো-কলিজা আমার হয়েছে ফুটা,
সেই যন্ত্রনায় করেছি আমি ছটফট।
বন্ধুরে নয়নের জ্বলে নিরবে কাঁদাইলি
ভাসাইলি দুখের সাগরে
কত কস্টে আছি-আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।
কত চেয়েছি তোরে আমি
তবুও আমি তোরে পাইলাম না
যে যারে ভালোবাসে আচরনে যায়রে জানা-তবু বন্ধু তুমি বুঝলে না।
আমার অন্তর তোমায় ভালোবাসে
তোমায় ছাড়া আজ এ অন্তর কিছু বুঝে না
তোমার জন্য ব্যাকুল এ মন
তোমার জন্য মনের বাগান আজ করেছে হা-হা-কার।

এতদিন ভালোবেসে আসা খুব আপন এবং প্রিয় মানুষটিকে ভুলে যাওয়া কখনো সম্ভব নয়,যত দূরে যাওয় যায় তত মনে হয় কাছে চলে আসে,যে চলে গেছে তার জন্য জীবন ধংস করার কী কারন,তাই জেনে নিন ভালোবাসার মানুষটিকে দ্রুত ভুলে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক কিছু উপায়। আদর্শ খুঁজে বের করুন প্রতারণা কিংবা ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে দূরে চলে আসবার কষ্টটা আপনার একার বলে মনে হলেও বাস্তবে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই জীবনের কোন না কোন সময়ে এই কষ্টের পথটা ধরে হেঁটেছেন, হাঁটছেন এবং হাঁটবেনও।
ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিচ্ছেদ যে নো জীবনটাকে থমকে দেয়। আমাদের ভালোবাসার মানুষটি কিছুক্ষণের জন্য দূরে গেলে আমাদের পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার,সেখানে যদি ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে যান তাহলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ভেঙ্গে পড়ে সারাজীবন তো আর থাকা যায় না। আমরা থমকে গেলেও জীবন তো আর থেমে থাকবে না। তাই আমাদের নিজেদেরকেই সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনে।নতুন ভাবে উঠে দাঁড়াতে হবে, ভুলে যেতে হবে পুরোনো ফেলে আসা স্মৃতি। যা হয়ে গিয়েছে তা মন থেকে মেনে নিন অনেকেই সম্পর্কচ্ছেদ মন থেকে মেনে নিতে পারেন না।যার ফলে মানসিকভাবে আরও বেশি ভেঙে পরেন।কিন্তু যা হয়ে গিয়েছে তা মেনে নেয়াই ভালো।কারণ এতে করে নতুন কিছুর প্রতি নজর দেয়ার আশা জন্মে মনে। যিনি চলে গিয়েছেন তাকে চলে যেতে দিন যিনি চলে গিয়েছেন তাকে সত্যিকার অর্থেই যেতে দিন। নিজের মনে তার স্মৃতি রেখে এবং জীবনে তার রেখে যাওয়া স্মৃতি মনে করে কষ্ট পাওয়া কোনো অর্থ নেই।তাকে যেতে দিলে আপনি নিজেকে সামলে নিতে পারবেন।নিজেকে ব্যস্ত রাখুন নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করুন নানা কাজে।অবসর বসে থাকলে বা একা থাকলে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে,তাই একা থাকবেন না এবং নিজেকে খালি বসিয়ে রাখবেন না। পেছনে ফিরে দেখবেন না জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্যই শুধুমাত্র পিছনে ফিরে দেখা উচিত।কষ্ট পেতে বারবার পেছনে ফিরে দেখার কোনো অর্থ নেই।এতে করে আপনি আরও ভেঙ্গে পরতে পারেন।তাই অতীত ধরে না রেখে ভবিষ্যতটা ভাবুন।পুরোনো স্মৃতি ভোলার জন্য নতুন স্মৃতি গড়ে নিন নতুন কোনো স্মৃতি না গড়ে নিলে পুরোনো স্মৃতিই বারবার মনে পড়বে।তাই নতুন করে ভালো কিছু স্মৃতি গড়ে নিন যা আপনার পুরোনো স্মৃতিকে ভুলিয়ে দেবে।পুরোনো মানুষটিকে যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন আপনার পুরোনো প্রেমিক প্রেমিকার সাথে সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন করে দিন,এবং তার কাছ দুরে চলে যান।একজন মানুষ পুরোপুরি চোখের আড়াল হয়ে গেলে মন থেকে মুছে যেতে খুব বেশি দেরি লাগে না এবং কষ্টও কম হয়। তাই কোনো ধরণের যোগাযোগের পথ খোলা রাখবেন না।নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত করুন। যিনি চলে গিয়েছেন আপনাকে ফেলে তার জন্য কষ্ট কেন পাবেন তা একবার ভেবে দেখুন।আপনাকেও ভুলতে হবে এই প্রতিজ্ঞা করে নিজের মনকে দৃঢ় করুন। নতুন করে ভালোবাসতে শিখুন ভালোবাসা একবারই হয় এটি ভুল কথা। সত্যিকারের ভালোবাসা সবকিছু ভুলিয়ে দিতে পারে। নতুন করে ভালোবাসতে শিখুন। এবার আপনি হয়তো নিজের সত্যিকারের ভালোবাসায় ভুলে যেতে পারবেন ফেলে আসা ভুলটি।

সন্দেহ ভালোবাসাকে নিঃশেষ করে দেয়। ভালোবাসার সম্পর্ককে সব সময় সুন্দর রাখার অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিশ্বাস। প্রতারণা করা কখনো উচিত না। মানুষের মন একটা অদ্ভুত রকমের। প্রেম কখনো বলে-কয়ে আসে না। প্রেম মানে না সমাজ সংসার, লোকলজ্জা, চক্ষুলজ্জা। নারী-পুরুষ সম্পর্ককে কোনো ছাঁচে ফেলা যায় না। এত বেশি পরিবর্তন হয়, মানুষের মনের তা নিয়ন্ত্রণ করাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। মানুষের আবেগ, ভালোবাসা, কষ্ট, যন্ত্রণার অনুভূতিগুলো দেখানো যায় না, অনুভব করা যায়। তাই, ভালোবাসার মানুষটির যত্ন নিতে হয়। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা-মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দিতে হয়। যেকোনো মূল্যে বিশ্বাস বা আস্থার জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে। নৈতিকতাবোধ ভালোবাসায় থাকাটা খুব জরুরি। সম্পর্কের প্রতি সৎ থাকতে হবে।
কদিন আগে হঠাৎ খেয়াল হলো, ফেসবুকে লিখলাম—ভালোবাসার আসলে সংজ্ঞা কী? প্রত্যেকে নিজের মতো করে উত্তর দিল। যেমন নানীগোপাল দাস লিখেছেন,
‘ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি, যা থাকলে মনে হয় বড় বালাই। একে কোথায় রাখি আর যার অভাবে মনে হয় বেঁচে থাকা অর্থহীন। যার গভীরতা মাপতে গেলে খেই হারাতে হয়। যার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা মাপতে গিয়ে দিশেহারা গণিতজ্ঞ।
সুনন্দা বলল, ‘ভালোবাসার অনুভূতিগুলো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে। তার কাছে ভালোবাসা হচ্ছে এখন “দায়িত্বপালন”! ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখার দায়িত্ব—এই দায়িত্ববোধ অনেক কিছুর…।
তাই বলি —
‘ভালোবাসার বাগানে সম্পর্কগুলো হলো এক একটি জীবন্ত গাছ আর সেই বাগানের মালী হিসেবে নিজেকে বসিয়ে দিয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করলেই ভালোবাসা সুগন্ধ ছড়াতে থাকবে তোমার চারপাশে।’
তাই ভালোবাসার যত্ন নিতে হয়। গাছে জল না দিলে যেমন গাছটি মরে যায়, ভালোবাসার যত্ন না নিলে ভালোবাসাও মরে যায়।

দীপাঞ্জন প্রধান
ঝাওয়া
Mob — 7602159678
লেখা — 27/08/2019
প্রকাশ — 21/09/2019
website — http://www.dipurstory.wordpress.com

Leave a comment