লাবন্যের মূর্ছনায়

অন্ধকার পৃথিবী

আকাশের বুকে মায়াবী চাঁদ
একটু একটু করে লুকিয়ে যাচ্ছে,
নির্ঘুম রাত জেগে বসে আছি আমি একা,
স্বপ্ন দেখা হয়না এখন,
শুধু অপেক্ষা তোমারি,
সোনালি ভোর আসবে বলে।

প্রতিটি রাত জেগে থাকা ছেলেটি,
হয়তো একদিন আর রাত জাগবে না,
তার পৃথিবীটাই হয়ে যাবে অন্ধকার রুপ।

আর দেখা হবে না,
সোনালি সকাল
দেখা হবে না তোমার হাসি ভরা মুখ,
আলতা পায়ে নদীর ঘাটে,
হবেনা আর কোনদিন দেখা হবেনা।

একদিন চলে যাবে ছেলেটি,
সব মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে,
ঘুমিয়ে যাবে অন্ধকার পৃথিবীতে,
আর জাগা হবে না নির্ঘুম রাত।

স্বপ্ন গুলো হয়ে যাবে একা,
তাদের নিয়ে চোখের পর্দার সামনে
আর রাখা হবে না কোনদিন।।

হবে না আর ছোঁয়া তোমার হাত দুটি,
রাখা হবেনা চোখে চোখ,
হবেনা আর দেখা লম্বা কেশ ছেড়ে দিয়ে,
পা ঝুলিয়ে বসে থাকা নদীর পাড়ে,
হবেনা আর কোনদিন দেখা হবেনা।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়

আমার শব্দতো তোমার কর্ণকুহর ভেদ করার কথা নয়!
তোমার দৃষ্টিসীমা থেকে যোজন যোজন দূরে থাকা এই আমার
বেদনার নীলচে আলোকরশ্মিটা তোমার কর্ণিয়া ভেদ করে
রেটিনার কোন্ কোষে ওতো পৌছানোর কথা নয়!
আমিতো তোমার আখিঁতে ঢেলে দেইনি
দু’ফোঁটা লোনা জল!
তবে কি করে বুঝলে প্রিয়তমা?
তবে কি তোমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে ছুঁয়েছে আমার দীর্ঘশ্বাস ?
তাই কি আমার জন্যে পাঠিয়ে দিলে এক আঁজলা প্রেম ?
আমিতো তোমার করতলে গুঁজে দেইনি
বিরহী শ্লোকের একটুকরো পংক্তি!
আমিতো বাতাসে ছড়িয়ে দেইনি
পুষ্পিত কষ্টের ঝাঁঝাল ঘ্রাণ!
যা কিনা বাষ্পিত হয়ে প্রবেশ করবে তোমার হৃদরন্ধ্রে।
হৃদয়ে থেকে থেকে স্মৃতিদের মৌন মিছিল আজ বড়ই ক্লান্ত।

চিঠি

তবুও, নিশ্চিত যেকোনো সময়
আসবে ডাক নীল খামে ।
যদিও তেমন প্রস্তুতি নেই আমার।
অন্য কোথাও নয়,প্রকৃতিই স্বর্গ –
গাছের সবুজ-আভায় মিষ্টি রোদের খেলা,
শাখায় শাখায় পাখির সু-মধুর কলতান ।
জীবন চলেছে জীবনের ছন্দে,
জীবনের রথ থেমে নেই ।
অনেক দূরে আকাশের গায়ে
ছিটেফোঁটা মেঘ,
নবান্নের গন্ধ বাতাসে,
রাসযাত্রার ধূম,
সুন্দর সময়ের সতেজ অনুভব
কুয়াশার আবেশ মন্থর আবছা।
ভাবনাগুলোও এখানেই নানা-ভাবে আবর্তিত
মাছেদের উল্লাস নদীর জলের মৃদু স্রোতধারায়,
মন পড়ে থাকে এখানে সেখানে,
ভালবাসার বিস্তীর্ন হৃদয় জুড়ে।

ইচ্ছা

আমি শুধু পেতে চাই যেতে চাই
চিরকাল তোমার স্নিগ্ধ সান্নিধ্যে ।
এখানে চরম নৈরাজ্যে আর পারি না
উন্মুখ তোমার সন্নিধানে আকুল আমি
মণি মুক্তা খচিত জীবনের আবহ
চাইনা আমার সূর্য -চন্দ।
কাতর স্বরে ব্যাকুল আকুতি…
আমারে নাও,এখনি নাও ।
আমার আমৃত্যু স্বপ্নে সব সময় সকল বৈচিত্র্যে
যত দূরেই যাই আমি যে প্রান্তেই থাকি
ক্ষত বিক্ষত অন্তরে আমার
শুধুই তুমি শুধুই তুমি !

গোধূলী বেলা

ধূসর বিকেল হলেই তুমি থাকবে চায়ের কাপে
ক্লান্তিগুলো রাখবে ঢেকে জটিল সকল চাপে!
দুঃখগুলো রাখব দূরে উড়িয়ে সুখের ঘুড়ি,
শক্ত হাতে ধরব লাটাই খেলব লুকোচুরি!
রাত্রি ছুঁয়ে জোছনা মেখে ঘুমহারানো চোখে
এক পলকে থাকব চেয়ে কেবা মোরে রোখে।
একটু পরেই রাত্রিটাকে ছিনিয়ে নেবে কেউ
মনের উঠোন ভরে আছে এক সমুদ্র ঢেউ।
ফুলের বনে মৈামাছি হয়ে ঘুরবে কুসুম গলি
জেনে রেখ তুমি আমার প্রথম ফোঁটা কলি।
হূদয়পুরে নামছে শ্রাবণ বইছে অঝোরধারা,
কেমন করে বাঁচব বল এই তোমাকে ছাড়া!

একাত্মতা

বুকে হাত বুলিয়ে দেয়
ভাল থাকি এই আবেশেই,
নয়ত ভাল থাকার ভান করি,
ঝাপিয়ে পড়ি কল্পিত বুকে,
তুমি দ্বন্দ্বের আকাশে ঘনিয়ে আসা মেঘে
বৃষ্টি ভিজবে বলে দূরে থাক এ ভাঙ্গা-ডানা পাখির থেকে।
পাখি তবু সে চক্ষু বুজেই থাকে,
ছেঁড়া সূর্য দেখবার আশায়।

প্রলাপ

আমারী হয়তো ছিল সব ভুল।
রূপ বৈচিত্র নিয়ে প্রকৃতি আমার কাছে
ফ্যাকাশে হয়ে যায় ।
চিরকাল বন্দী হয়ে যাই আমি
বদ্ধ উন্মাদ প্রলাপের কাছে।
মাতোয়ারায় পাগল করে তোলে
তোমার ফুলের কুসুম সুগন্ধ আমাকে
বেমালুম আমি হেরে যাই স্বার্থপরতার কাছে ।
তোমার দিগন্ত বিস্তৃত চুলের অবিন্যস্ত সর্পিল
বিষভার বহন করার ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই।
এই হেমন্তে কাশফুলে ছেয়ে গেছে ,
তা তোমারী জন্যে- তোমায় আর আকৃষ্ট
করে না আমার মূল্যহীন প্রেম।
হারিয়ে যাই বড় চেনা বড় জানা এই লোকারণ্যের ভীরে
অন্ধকারে সমর্পণ করি আমি নিজস্ব সত্ত্বাকে ।

জবাফুল

সেদিন বেলাশেষে তুমি
একটি রক্তজবার কথা বলেছিলে;
নোনাজলে ফুটবে কি সেই জবাফুল ?
ভাসাবে কি তরী রক্ত-প্লাবনে?
রাতভর অশ্রু-স্নাত
মেঘেদের গায়ে ধূসর জামা
তোমার অবয়বে নিবিষ্ট শঙ্খচিল-ডানা
শিথানের পাশে গুটিসুটি জোনাক-তারা—
তুমি আমাকে একটি জবাফুলের কথা বলেছিলে…
নিঝুম বনের বুক চিরে যে নদী চলে গেছে
আমি তার নাম জানি না
তুমিও তো তাকে ভুল নামে ডাকো !
স্বচ্ছ কাচের দেয়াল ভেঙে
তুলে আনো প্রভাত-কুসুম তরী…
হে নিষ্ঠুর প্রিয়তমা ! প্রবোধ দিও না !

তোমায় পাবো বলে

রাত অন্ধকার বটে, তোমাকে পাবার আকাঙ্ক্ষা যেন বন্য হয়ে ওঠে
জানি শরীরের ভাজে,অস্তিত্বের যন্ত্রনায়, এ আমার আসহায় আর্তনাদ।
এত অসহায়ত্বের মাঝেও শুধু তোমাকে চাই।
তুমি কি তোমার মনের কোঠরে চিৎকার করে ওঠো?
ভালবাসার ক্ষুধায় তুমিও কি কাতর হও আমার মতো?
দূর থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুরে মনটা ছটফটিয়ে ওঠে
ভীষন অসম্ভবের মাঝে আমি তোমাকে চাই,
ঠিক যেমন করে তুমি চেয়েছিলে আমাকে।
একসময় এখানকার বাতাস বড় ভালবাসতো আমাদের,
বিচ্ছিন্ন মেঘগুলো আর দমকা বাতাসে টেবিলসহ বইগুলো কাঁপে
নদীতে মাঝির গান ভাসে, মনে হয় মনটার এখনো বয়স হয় নি।
কতবার কল্পদৃষ্টিতে তোমার চোখে আলপনা এঁকেছি,
দু’বাহু বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছি বন্ধনের শিকলে আঘাত হানতে…..।
রৌদ্রছায়ার মায়াবেলায় রাত দিনের নিয়মের বেড়ীতে
চুপি চুপি বলেছিলাম পরম সত্যটি, তোমাকে চাই আমি।
খেয়ালী বাতাসের চেয়েও ভয়ংকর ছিল আমার চাওয়া
অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না, তাই চোখের সাগর আজ রক্তস্রোত..।

কবিতা শোনাবে

তুমি আমার পাশে বসে একটা কবিতা শোনাবে ?
তোমার সাথে আমার এক অন্যরকম সেতু হবে মনে মনে
তুমি আমায় কবিতা শোনাবে আজ রাতে…!
আর কিছুক্ষণের ভেতরই এলোমেলো হয়ে যেতে যাচ্ছে সব…
তুমি আমার পাশে বসে একটা কবিতা শোনাবে কি?
একটা ব্যক্তিগত কষ্টের সর্বজনিন হয়ে ওঠার কবিতা.
আমার ভেতর কবিতা শোনার এক আকুল তৃষ্ণা;
স্পর্শহীন ভালোবাসার মতো তোমার সাথে আমি কবিতার সম্পর্ক পাতাবো।
আর কেউ জানুক না জানুক তুমি তো একদিন জানবে যে তুমিই আমার কবিতা!
তুমি আমাকে একটি কবিতা শোনাবে আজ রাতে?
দেখো আমি চলে যাচ্ছি আজ হতে দশ বছর আগে
আমার কোন সময়ের এর প্রয়োজন নেই,
এই দেখো আমি ওখানে পৌঁছে গেছি,
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ঘটনা প্রবাহ কিংবা দিনাতিপাত
এক পুতুল পুতুল খেলা।
কিছু গনদেবতা আর দেবী,
একটা মিথ্যের মঞ্চ।
আমার ভীষণ অস্থির বোধ হচ্ছে,
আমি ঐ সময় হতে এখানে ফিরে আসতে চাই
তুমি আজ রাতে একটা কবিতা শোনাবে আমায়?
আর কিছুক্ষণের ভেতরই এলোমেলো হয়ে যেতে যাচ্ছে সব…
তুমি আমার পাশে বসে একটা কবিতা শোনাবে কি?
আমার ভেতর প্রচণ্ড এক অস্থিরতা,
আমার রাতজাগা তাঁরাদের মতন অসুখ করেছে।
তুমি আমাকে একটা কবিতা শোনাবে ?
আমি চুপ করে বসে কবিতা শুনব তোমার কণ্ঠে।
তুমি জীবনানন্দ হবে কি!
শোনাবে একটি কবিতা?
যে কোন কবিতা নয়,
একটা ব্যক্তিগত কষ্টের সর্বজনিন কবিতা ।

বিচরণ

যদি আমায় উপলব্ধি করতে,
তাহলে বুঝতে,
আমার হৃদয়ের গহীনের শব্দ ।
শুনতে পেতে,
আমার হৃদয়ের হৃদ স্পন্দন ।
যেখানে শুধু তোমার বিচরণ ………
খুঁজে পেতে,
কারনে অকারনে তোমার অজস্র কারন ।
বুঝে নিতে,
কতো গভীর ভালোবাসায় এই হৃদয়ে
করেছি তোমাকে ধারন ..।

ওলটপালট

একেকটা মূহুর্ত আসে,
ঝড়ের বেগে ওলোটপালোট সব।
কিছুইনা অথচ তীব্র সাধারণ কিছু ,
ঠেলে সরিয়ে দেয় আমায় এককোণায়।
একটু আগেও তো কাঁধ মিলিয়েছি,
তছনছ হয়ে গেছে সংযমের শাসন।
নতজানু হয়ে গেলে আখরের কাছে
কবিতা হয়,দাবদাহেও বসন্ত আসে।
হয়ত একনিষ্ঠ হতেই পারিনি কখনো
তোমার কাছে অথবা কবিতার কাছে।
তোমায় পেলে তবে কেন বল,
কবিতাও ভুলে যাই নির্দ্বিধায়??

প্রয়াস

প্রতিদিন, প্রতিরাত,
আনত সময়ের দীর্ঘশ্বাস।
এ কেবল আমাকে মানায়।
হাল ছেড়ে দেওয়া জীবনের দোলাচল
যে হাওয়ায় তিরতির করে চুমো খাব ভাবি,
সেখানেই ঝোড়ো নিঃশ্বাস।
অবিকল এক বিভ্রম,
মিশে যেতেই থাকে ক্রমান্বয়ে
ভাল থাকবার কৌটোয়।
ঢাকনা খোলবার যে নিশ্চেষ্ট প্রয়াস,
তাতে ঢেউ ওঠেনি আজও।
এবেলায় তাতে ফেনা-ভাতের প্রতিশ্রুতি,
আগামীতে নির্ঘাত বিপর্যয়,
সূর্য এখন আপাত শান্ত ও গতিময়।
আলো ঢালবার সময় আসেনি তার।

বড় একা

আজ ও শেষ রাতে বৃষ্টি হয়ে আমার কষ্ট ঝরে…
তুমি ফিরবে বলে তোমার পথে আজো দাঁড়িয়ে…
অনুভূতির সাতটা রং এ তোমায় আঁকি আমি…
আর কখন করবোনা রাগ ফিরে এসো তুমি…
সারাটি ক্ষন এই বুকের নীচে তোমায় লুকিয়ে রাখি…
কখনও কি আর পাব ফিরে সেই….
রিষড়ার ক্লাসিকের জলসায় তোমার দেখা….
আজ ও অনেক রাতে জেগে উঠি
এই বুঝি দিলে ফোন?
এই বুঝি এলে ফিরে,জুড়িয়ে ভাগ্যে মন …
সৃতির পাতার সাতটি রং যখন হবে শেষ…
তখন আমায় খুঁজবে তুমি হৃদয় ভাঙ্গা দেশ..
মুখো-মুখি চলার পথে হয় যদি কভু দেখা…
বলব শুধু আজ ও আছি তোমারি জন্য
আামি বড় একা…

কল্পনার আঙিনায়

তুমি আমার স্বপ্নে আসো, কাছে আসনা
ভালোবেসে চুম্বন করো, শেষ করো না
আমি জানি তুমি আসবে, ঠিক আসবে
এসে আমায় তোমার হৃদ-কোলে নেবে
তোমাকে আসতেই হবে
আমার কল্পনায় আসো বাস্তবে আসোনা
স্পর্শ সুখে ঘুম ভাঙিয়ে দাও অথচ তোমায় পাইনা
আমি জানি তোমার ঠোট আমাকেই চায়
কাছে এসে তুমি সিক্ত কর আমায়
তোমাকে আসতেই হবে
বর্শা হয়ে সিক্ত কর তবু অন্তর শূন্য থাকে
প্রখর তাপে আমায় পুড়িয়ে মার, শুধু ঠোটই ছবি আঁকে
খরস্রোতা আমি, তবু তেসুতি কেন
আমি ভয়নিবারণ, মনভিলাষ তুমি জান
তোমাকে আসতেই হবে
মনমোহিনী, সরূপিণী তুমি আমার পাকা বুড়ি
তোমার মালা চন্দনের অভিলাষী নন্দিনী, তুমি বিদুষী নারী
তোমাকে আসতেই হবে……..”
অসহায় তুমি

তুমি তছনছ করে দাও
পড়ন্ত গোধূলীর রক্তিম আভা
হৃদ বিদ্যুৎ-স্ফুলিঙ্গ নিয়ে ছুটে আস
চন্দ্রের মুখোমুখি. নীলাভ জোৎস্নার আলো
খেলা করে তোমার শরীর বেয়ে।
নীল আকাশে অগনিত তারার মাঝেে
উজ্জল নক্ষত্র হয়ে তুমি হাসো
তোমার বাতায়নে ভালবাসারা ভীড় করে।
তোমার চোখের পাতা ওঠানামায়
ব্যস্ত হয়ে ওঠে কত অজানা প্রেমিক
প্রেমের বিশালতায়, আদরের সান্তনায়।
তবু তুমি হাসো, অাবার কাঁদো,,,,,,,,,,,,,

শুনতে অবাক লাগে

আজ বড্ড অবাক হয়ে শুনলাম
তুমি নাকি ভালোবাসা খুঁজে বেড়াও ইদানিং ?
তবে ঐদিন কোথায় ছিলো তোমার আপ্রাণ চেষ্টা !
আমি তো মুঠো ভর্তি ভালোবাসা নিয়ে
তোমার দ্বারে কড়া নেড়েছিলাম !
কই সেদিন তো অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলে ।
আজই শুনলাম তুমি নাকি এখন
স্বপ্নের পিছনে অবিরাম ছুটে বেড়াও ?
একদিন তো আমি অসংখ্য স্বপ্ন নিয়ে তোমার
দুয়ারে অপেক্ষার প্রহর গুণে গুণে ক্লান্ত হয়ে ফিরে ছিলাম ,
কই সেদিন তো স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখলে না ।
আজই শুনলাম তুমি নাকি এখন বাঁচার জন্য
তীব্র আকুতি নিয়ে কারো বুকে ঝাপটে পরতেও ভয় পাও না ?
আমি তো বুকের পাঁজরে তোমাকে নিয়ে বাঁচার জন্য
বার বার বুকের ভিটায় দ্বার খুলে বসে ছিলাম ।
কই সেদিন তো বুকের রাজ পথে তুমি বিচরণ করতে আসনি ।
আজই শুনলাম তুমি নাকি রাত্রি জেগে একা নির্জনে
দূর থেকে ভেসে যাওয়া জ্যোৎস্নায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে
হঠাৎ করেই কেঁদে উঠো ?
আমি তো লক্ষ্য জোনাকি আর অজস্র জ্যোৎস্না রাত নিয়ে
তোমার মনের আঙ্গিনায় কতবার ছুটে গেছি ।
কই তখন তো তুমি জ্যোৎস্না স্নানে নিজেকে ভাসালে না ।
তবে আজ কেনো অতো কিছুর স্বপ্ন তোমার ?

অভিমান

কখনো কখনো ভাবি অভিমান করে
তোমায় ছেড়ে পালিয়ে যাব
আমিতো হলদে পাখির মতো মুক্ত
ইচ্ছে করলেই যুগল ডানা মেলে
পাড়ি দিতে পারি সাত সমুদ্দুর।
উধাও হতে পারি সাদা মেঘের রাজ্যে
বিস্তৃত নীলিমার নিঃসীম দিগন্তে।
তবুও আমি হারাতে পারি না
সহসা টান পড়ে হৃদয় নাটাইয়ের অদৃশ্য সুতোয়
যাতে আমি বাঁধা পরে গেছি।
পথে পথে যেতে যেতে মায়াবিনীর বাঁশির সুরে
থমকে দাঁড়াই, সুরলহরী শুনতে শুনতে
কখনোবা ঘুমিয়ে পড়ি ঘাসের কোলে
ঝরা পাতায়, প্রবীণ কোন বটের ছায়ায়
ঘুমের ঘোরে আমার চোখে গোলাপি রঙ স্বপ্ন ভাসে
স্বপ্নে আমি হাঁটতে থাকি
মায়াবিনীর হাতটি ধরে
প্রীতিবোধের উষ্ণ ছোঁয়ায়
উচ্ছ্বল হাসি ছড়িয়ে পড়ে, খোলা হাওয়ার ভেলায় ভেসে
মাধবীর গন্ধ এসে আমার প্রাণে জাগিয়ে দেয়
নতুন সূর্য, মিষ্টি সকাল, সতেজ আশা
এরই নাম কি ভালোবাসা ?

খুঁজে বেড়াই

কালো কালো সপ্ন ..
ভূতের মতো ..।
বাঁধ ভাঙা অশ্রু ..ভিজিয়ে দেয় মাটি ..
বন্ধ্যা জননীর
বুকের পাঁজর দিয়ে ..
কলম তৈরী করি !
তাই কবিতা কাঁদে ..।
বাঁশ বাগানের মাথায় পূর্ণিমার চাঁদ
থমথমে ..!
রাতের সাপ ইঁদুরের গর্ত খুঁজে …
আমিও খুঁজি
কবিতা .. জীবনের গর্তে ..!

অন্তহীন

এক পুরোনো ধাক্কায় আগামী
রেখে গেল ভরা শূন্যতা।
গাঢ় নীল হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নেয়
আর একটি তারার।
গনগনে আঁচে সেঁকে নেই অবয়ব
নির্বাণমুখী আলোয়।
ঘুরপাক খাই, একলা পথের বাঁকে
তখন মুছে যায় চারিদিক।
ফিরে আসে আনমনা নিস্তব্ধতায়
একে একে সব আলো।
ধীরে ধীরে ঝিম ধরে শরীরে সন্ধ্যা নামে
যেন ঝলসে উঠে নিভিয়ে দিল।
একসময় হিম হয়ে শরীর
অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

লক্ষভ্রস্ট

উড়াল মেঘের সাথী হয়ে
জীবনের স্বপ্ন উড়ে গেছে ।
এখন বড় জটিল জীবনের ভার
আমি আর এই আমার পথ চলা
জীবনের ভাবনা আজ অরণ্যের নির্বাসনে।
কিছু লক্ষ্য ছিলো , ছিলো কিছু স্বপ্নঘেরা বাসনা-
একটা প্রশ্নময় জীবনের ঘানি বিরামহীন
ভুলের মাশুল দিয়েছে বারবার দিকভ্রান্তের পথে ,
যে পথ লক্ষভ্রষ্ট গন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে ।
জড়তাহীন নির্বিঘ্ন সুন্দর প্রত্যয়ের প্রত্যাশায়
সাজাতে চেয়েছিলাম মনের মতো করে –
আজ সেই আশা শুধুই কল্পনার আবহে আকাশে উড়ে,
হৃদয়ের যত প্রেম , যত ভালোবাসা ।
সবই আজ আমার ভাবনার ছেঁড়া জালে ।

তবু আছ

দৃষ্টিসীমায় তুমি নেই,
তবু তুমি আছ হৃদয়ের অন্তরালে
নেই তুমি সামনে
তোমার স্র্পশ ঘিরে রাখে সারাক্ষন।
যেমন তুমি কথায় নেই,
অথচ শব্দে থেকে যাও;
দুহাত জড়িয়ে
আলিঙ্গনের ভালবাসার চিহ্ন
তুমি আমার শরীরে রেখে যাও।
খোলা চোখে তুমি নেই,
অথচ চোখ বুঝলেই দেখি
প্রেমদেবী হয়ে দাড়িয়ে আছো
ভালবাসার নদীতে প্রেমময়ী হয়ে
বয়ে যাও নিরবধি
আমাকে একটু প্রেম দিতে যদি।
বালুচরী

বালুচরে একান্তে আমি নিরাশার নিরজনে,
প্রদ্বীপের শিখা জ্বেলে রই ক্ষীণ আলোয় আনমনে ।
শরতের শিউলিরা দোলা দিয়ে যায় চুপিসারে,
বিরহ অভিসার আসে আমার বাগানে ফুলের বাহারে।
সীমানা পেরিয়ে বাড়ায় কষ্টের উপলব্ধি
অব্যক্ত হৃদয়ের ভাষা আজ বড়ই অস্পষ্ট।
হারিয়ে যাওয়াদূর নিলীমায় দিগন্তের
ধূসর ওপারে কোথাও বিরহের মাঝে দুঃখ বাড়ায়।
ভুলগুলো ঐ ভুলে যেতে চাই
আদরের প্রহর-গুলো নীরবে কাদাঁয়।
কাব্য কথার লেখনীর ফাঁকি শূন্য পাতায়,
নীল বেদনা কাঁদে একাকী নীরব যন্ত্রণায়।
কষ্টের ঝালাপালার অচল পাতায় লেখনী আমার,
এলোমেলো শব্দের কাতরে পঙক্তিমালা যায় হারিয়ে।
আলিঙ্গন

দৃষ্টিসীমায় তুমি নেই,
তবু তুমি আছ হৃদয়ের অন্তরালে
নেই তুমি সামনে
তোমার পরশ ঘিরে রাখে সারাক্ষন।
যেমন তুমি কথায় নেই,
অথচ শব্দে থেকে যাও;
দুহাত জড়িয়ে
আলিঙ্গনের ভালবাসার চিহ্ন
তুমি আমার শরীরে রেখে যাও।
খোলা চোখে তুমি নেই,
অথচ চোখ বুঝলেই দেখি
প্রেমদেবী হয়ে দাড়িয়ে আছো
ভালবাসার নদীতে প্রেমময়ী হয়ে
বয়ে যাও নিরবধি
আমাকে একটু প্রেম দিতে যদি।

স্বপ্ন দেখি তাই

মরুপথে যদি আসে ফিরে
উন্মিলীত চোখে তবু জেগে থাকে
সেই স্বপ্ন দেখার ক্ষণ দেখবে বলে।
আমার স্বপ্ন সাধ পূরণ হওয়ার নয়,
আমিও স্বপ্নহীন নই ,স্বপ্ন দেখি তাই
জেগে জেগেই হারাই।
আলোয় মাখানো পূর্ণিমায় ভরা বারোমাস
সেখানে স্বপ্নেরা খেলা করে সবুজ শাখায় স্বপ্নের
বিচরণ দেখি নিরন্তর।
দুরাকাশে চাঁদের দেশে বিস্তর ভাবনার শুকনো
ডালে বাস করি আর নিজের মতো করে
স্বপ্ন বিভোরে তোমায় ভাবি
কিছুতেই দেয়না ধরা স্বপ্ন আমার।
অকৃপণ প্রহর কেটে যায় স্বপ্নেরা কাছে আসে না ,
আমার চোখে স্বপ্ন অপেক্ষায়,
অপেক্ষায় হারিয়ে যায় সেই সুদুরে।
হারিয়ে ফেলি খেই চেয়ে চেয়ে দেখি
স্বপ্নহীন মাঝে তোমার স্বপ্ন
সাধিকাদের অবাধ বিচরণ
বাহারি ফানুসের ভিড়ে
আমার স্বপ্ন হয় না উজ্জ্বল।

অভিসার

আমি স্থির অবিচল শত বিপত্তিতেও
আমার প্রেমের মূল্য আমার কাছে দৃঢ়
জোরালো ভূমিকম্পও টলাতে পারে না
তোমার আমার সেই সুখময় সৃতিপট ।
আমার সমস্ত অস্তিত্বের মাঝে
যার অবিরাম দখল- সেই তুমি
অনবদ্য ভাবনায় নিরন্তর তুমি-
আমার অন্তরকে করেছে চূর্ণ -বিচূর্ণ
তোমার অবহেলায় আমি আজ ক্ষত-বিক্ষত।
আমি তোমার ভালবাসাকে বুকে নিয়ে
স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলি।
আমাকে পদদলিত করে আমার অস্তিত্বকে
চরম বিপন্ন করেছো তুমি ।
তুমি আমার সারা অন্তরে বিপ্লব প্রেমের ,
তোমার সান্নিধ্য পিপাসা আমার চিরন্তন,
যাও অনেক অনেক দূরে- যাও ভুলে
তবুও আমার চেতনায় তুমি অমলিন ।
আমার সকল ভাবনায় প্রেরণার গল্প ,
নির্জনে শুধু তোমারই অভিসারের কাব্যে ।

আর্তনাত

বেলাশেষে গোধুলীর বিচ্ছিন্নতার মনোবিকাশে
চোখে ভেসে আসে আগাম অন্ধকার
দূরাভাষে তুমি ছলনার হাসি হেসে
হতাশার বীজ রোপন করো বিনাচাষে।
মেয়াদউত্তীর্ন প্রেম চুক্তির বিনিয়োগে
অচল করে দাও জীবনাবাস।
তোমার ছলনা কেউ তো বুঝেনা
ঘটে যে শুধু চৈত্রের সর্বনাশ
আড়ি পেতে বসে থাকে মনে
কি হতে কি হয়ে যায় যখন তখন।
নীল নকশার ব্যর্থতায় শঙ্কামুক্ত থেকেছি গোপনে
তোমার বিলাসী মনের গোপন কুঠরীতে জারী করো
খেলাপী প্রেমের আর্তনাদ।
প্রবণতা বাড়ছে প্রেম ও দাসত্বের
চলছে পরকীয়ার জলোচ্ছাস
সমাজের মাঝে তাই-তো বাড়ছে নিত্য আহাকার।
তোমার ছলনায় বাসা বাঁধে প্রাণ
প্রেমের অনলে পোড়াও তুমি আমার হৃদয় খানি।
আমি স্মৃতির আগুনে পুড়ে হই বেদনা সন্ধানী ।

অঙ্কুর

আমার চোখে ঘুম নেই,স্বপ্ন নেই
স্বপ্নের পলিতে শস্যদানার জাগরণ নেই
মরুভূমির করুণা তলে প্রেমের ঠোঁট মেলে
তবু চুম্বন উদ্যত মরীচিকা আমি সাহসে বুক বাঁধি
হৃদয়ের গোপন রেণু মাখি গায়ে
প্রেমিকার ভালবাসার কসম খেয়ে
সামনে দাঁড়াই এ হৃদয় আমার
এই হৃদয়ের নোনাজলে মিশে আছে আমার প্রেমের ইতিহাস
অনার্য আমি ধরাতলে গর্ভের ঘুম ভাঙাই
তৃণাঙ্কুরের স্বপ্ন জাগাই প্রেমের স্রোত
দ্যাখো আমার ব্যাথিত হৃদয়
এই দ্যাখো অামার প্রেমের শোণিতাক্ত পরিনয়
আমার স্বপ্নের কোনো রঙ নেই,
স্বপ্ন আসে শাদা-কালো দীর্ঘ জাগরণে
রজস্বঃলা রাত্রি ফোটায় মনের আলিঙ্গনে
হৃদয়ের বুক চিরে এখন দারুণ বৃষ্টির ধারাপাত।
তরী

আশার তরী ভাসিয়ে চলি নিরন্তর
নাই কিনারা দিশেহারা এই উদাসী অন্তর ।
হারিয়ে যাওয়ার চরম সুখে,
উথাল পাথাল ঢেউয়ের বুকে
ভালোবাসা শূণ্যতায় আদর সোহাগের
অনুভবের তানপুরায় আলাপ বেহাগের।
রাত্রি নামে জোৎস্নাকাশে
বেদনা বিধুর মনের মাঝে।

না পারিনি

না পারিনি আমি আর পারবোওনা
পারিনি মেনে নিতে তোমার দখলদারী,
আমি স্বাধীনতা দিতে ও নিতে বিশ্বাসী
তাও যদি পারতাম !!!
তুমি চাইতে পুরুষকার,
যদি পুরুষ হতো আমার একামাত্র পরিচয়
তুমি হ’তে তখন নারীবাদী, আমাকে দিতে শাসকের দূর্নাম।
আমি তো তোমার দৈনন্দিন প্রয়োজনে
যা কিছু লাগে সবই তো দিয়েছি
দিয়েছি তো হৃদয় দিয়ে সুখের শয্যা।
কিন্তু তাতে তোমার চাহিদা মেটেনি আর মিটবেওনা জানি
আসলে তোমার অঙ্ক টা আমি মেলাতে পারিনি হয়তো
চাবি দেওয়া ছোট্ট বেলার সে পুতুলটাকে খুঁজেছ তুমি
আমি হতে পারিনি অবর্তিন্য সেই পুতুল এর ভূমিকায়।
তোমার বেখেয়ালী ধুসর রং এর আবর্তে ফুরিয়ে গেছে সব রঙ
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছো হিসেবী অধিকারের ফাঁদে ।
প্রশ্ন একটাই, “কি দিয়েছো তুমি আমায় ?”
উত্তর দিতে গিয়ে আচমকা থমকে গেছি
ভাবছি সত্যি তো ! কি দিয়েছি তোমায়।
সেপারেশন চাইছো ! তার মানে কি তা তুমি জানো ?
একবার ভেবে দেখো সেতো না চাইতেও পেয়ে গেছো কবে?
হে আধুনিকা – গরদের থান পরে, কতো কি করেছ
কবচ তাবিজ দিয়ে বাঁধতে চেয়েছো স্বাধীনচেতা মানুষটাকেে
একবারের জন্যেও কি কখনো মনের জানালায় উঁকি দিয়ে দেখেছো ?
জানি সেই মন মানসিকতা তোমার কোনদিনই ছিলনা।

তুমি বল

তুমি আমার থেকে অনেক দূর ,,
কতটুকু দূরে বলতে পার ?
এতটুকু দূর যেখানে আমার
স্মৃতিগুলো তোমাকে স্পর্শ করে না ,
বার বার তোমাকে মনে করিয়ে দেয় না
কেউ একজন তোমাকে ভালোবেসে ছিল,,
তার নিজের চেয়ে বেশী ।….
আজ হয়তো গন্তব্যহীন হয়ে হেটে চলছি আমি ,
কোন ঠিকানায় গিয়ে উঠব জানিনা ,,
নিশ্চুপ নিরবতায় নিথর দেহটা কালেই
হারিয়ে যাবে একটু একটু করে ,,
কিন্তু কেন এমন হল? বলতে পার ?
তা-হলে এটাই কি জীবন ?
না কি এটা একটা সত্যি কারের ভালোবাসার প্রাপ্যতা !
তুমিই বল ?

মরীচিকা

রোদ্দুর ভরা এই দিনে,
আজও আমার আকাশ জুড়ে মেঘের ঘণঘটা ।
রংধনুর আলোতে আজও বসে তুমি,
তবে বৃষ্টি শেষে আসে আঁধারেরই যাত্রা ।
ভোরের আলোয় ভিজবো বলে জেগে ওঠি আমি,
তবে তোমার অশ্রুতেই পূর্ণতা পায় ঐ শিশিরের কণা ।
হাসবো বলে অামি পাশে চাই তোমার ভালোবাসাকে,
তবে পাচ্ছি তোমায় মরিচীকা রূপে আমার বাস্তবে ।
দিন শেষে আমি আজ পথহারা পথিক,
গোধুলী সন্ধ্যা বেলা কাটে আজ আমার দিক বিদিক ।
স্রোতের তালে তালে স্বপেতে তুমি বিভোর,
ভাটার মায়াজালে আজ পাচ্ছি বালুচর ।
অনুভবের মাঝে থেকে খুঁজি স্বপ্নকে,
আজ সাদাকালোর দেশেও আসে স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে ।
বিষন্ন এ মন আমার আজ কাঁদে নীরবে,
সাগরের জল পূর্ণ হচ্ছে আজ আমার অশ্রুতে ।।

বৃষ্টি হয়ে ঝরব

যদি কোনো বৃষ্টি ভেজা রাতে,
তোমার চোখে ঘুম না আসে,
জানালার পাশে তুমি এসে দাঁড়িও ।
ভুল করে যদি আমার কথা মনে পরে যায় তোমার,
গ্রিলের ওপাশে দুটি হাঁত বাড়িয়ে দিও ।
আমি বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে তোমায় ছুঁয়ে দেবো,
তোমার মনে জমে থাকা সকল কষ্ট ধুয়ে দেবো ।
ঝিরি – ঝিরি হিমেল বাতাস হয়ে
ছুঁয়ে দেবো তোমার কোমল নরম মুখ-টি ।
না হয় দমকা হাওয়া হয়ে ছুঁয়ে যাবো তোমার চুল ।
বুঝে নিও তুমি সেটি বৃষ্টি ছিলো না,
ছিলাম আমি, আমি কাঁদছিলাম,
আমার সেই কান্নার জল গুলো
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে
তোমায় একটু ছোঁবে বলে ।
চুম্বন

মেঘ রোদ্দুরে ভিজে ভিজে যে প্রাসাদ গড়েছিলাম
সেটা যে স্মৃতিসৌধ কে ভেবেছিল?
তাই চোখ বন্ধ রেখেই দেখি
তুমি ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছ
গ্রীবা ছাড়িয়ে আরো গভীরে
নোনতা রক্ত ধারায়।
আমি গ্রীবা বাড়িয়ে আছি,
এখানে তোমার ঠোঁটের স্পর্শ পেতে চাই ।
ভেসে যাচ্ছি মেঘের শুভ্র পাহাড়ের মাঝে
আমি চোখ খোলা ও বন্ধ করার মধ্যে আছি,
আসলে দেখতে চাই
চোখ বন্ধ থাকলে তুমি কেমন করে ঠোঁট স্পর্শ কর।

শরৎ এলো

শিউলিঝরা শরৎ এলো মন ভরে যায আবেগে
কাশফুলের শুভ্রশোভা মন ভোলানো এ হৃদয়ে
সোনা রোদে আকাশ মর ভরে যায় প্রকৃতি
রঙিন হয়ে ওঠে মন যেন নব প্রেম পিরিতি
নদীর ধারে কাশবন দুলেছে কেমন টলমল
আনন্দে তাই আকাম বুকে বইছে নদীজল
শরৎ শোভার এই অবনী কেমন ঝল মল
আকাশটাতো নীলাম্বরী ছুটছে মেঘের দল
মরৎ আসে দারুন প্রবা দারুন উজ্জ্বরতায়
শিউলিমালা ভরা থাকে প্রেমের কথকথায়
প্রভাত হলেই ছুটে সবাই শিউলি কুড়াতে
প্রতীক্ষায় থাকতো দুচোখ সেই আঙ্গিনাতে
নীল আকাশে দেখ কেমন পেজা তুলার ভীড়
মন খারাপের মতো হঠাৎ বৃষ্টি ঝির ঝির।

কৌতুহল

পাঁপড়ি গুলো উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করে ,
ক্লান্ত পাঁপড়ি একটি একটি করে ঝরে পড়ে ।
চঞ্চল পাখি নীড়ে ফেরা ভুলে যায় ,
চাঁদ, মেঘের আড়ালে ঢেকে নেয় জোছনা ।
বিদগ্ধ চেতনায় তারুণ্য থেকে পৌঢ়ত্বে
চোখ এখন ঝাপসা -!
এখনও অনেক স্মৃতির প্রিয় মুহূর্তগুলো
একাকী দগ্ধীভূত করে ।
আমি সয়ে গেছি সব দহন জ্বালা ।
আজও ক্ষীণ হয়ে এখনও কানে সেই বাঁশির সুর
দোলা দেয় ,
থাক, না বলা কথাগুলো আমাতেই থাক ।
না জানা প্রশ্নের উত্তর নাইবা জানলাম ,
কৌতূহল জীবনটা কৌতূহলী হয়েই থাক ।

প্রেক্ষাপট

তোমার হৃদয় না ছুঁয়েও বলে দিতে পারি
এই রাত কতটা গভীর।
ঝিকমিক নক্ষত্র ছন্দে
রাত্রি শরীরে তোমার নিক্কন,
অঙ্কুশ মুদ্রায় নিবেদিত চতুষ্কোণ
উর্দ্ধে আকাশ শোনা যায় ভাসমান মেঘের গর্জন
এখন তোমার চোখের তারায় শিউলি বকুল;
এই প্রেক্ষাপটে অনায়াসে বৃষ্টি নামে
নিঃশর্ত কবিতা হয়ে।

সংলাপহীন সময়

সংলাপহীন সময়ে পথ গুলো নেমে যাচ্ছে
নদীর গভীরে
জলটা ক্রমশ কালো…..
উঠে আসছে। ঢেকে দিচ্ছে আমাদের মাটি
স্তব্ধ অরণ্য পাখি সব, নিশ্বাস চায়।
চলো শতাব্দী এসময় গল্প নয়….
পশুদের দল এখনও দাঁড়িয়ে আছে-
তোমার নিতম্ব আর সাজানো বুকে
এসো বন্ধু গভীর সঙ্গমে…..
রাত ভোর ভেঙ্গে দিই… এই মাটিতে
জঙ্গলের রাজ
তারপর দেখবো সূর্য গঙ্গার জলে।

তুমি জানতে চাওনি বলে

তুমি জানতে চাওনি বলে –
আমার স্বপ্ন সন্ধ্যায় নামেনা জ্বলেনা দীপ
তারারা করেনা লুকোচুরি
ফাগুনের বাতাসে বসন্তের রসে
রাঙায় না মন।

তুমি জানতে চাওনি বলে
আমার মনতরী তুলনা পাল,
মনের দেরাজে মেঘবালিকা করেনা খেলা,
অলিরা করেনা গুনগুন,
গ্রন্থিতে আসেনা শিহরণ,
শরৎ মেঘে পড়েনা শিশির ভেজা রোদ্দুর।

তুমি জানতে চাওনি বলে
উদাস দপুরে পাখিরা খুঁজেনা তার নীড়,
বাঁশ, ঝাউয়ের পাতা দেয়না শিষ,
আসেনা ডাহুক ডাকা ভোর,
দুই নয়নের মায়া অঞ্জনে ভসেনা
তোমার মুখ,
হয়না জোৎস্নাসিক্ত হৈমাকাশে
অবিচ্ছেদ্য প্রলাপ।

তুমি জানতে চাওনি বলে
শুধু কল্পনার আবেশে মাখা স্বপ্ন
বয়ে যায় জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে;
আজও আমি তোমার অপেক্ষায়
আমার মানব মিনারে
সৌধ গড়ে যাই,
ধূলোমাখা ভোরের তন্দ্রা ভাঙা আলোয়
আর এক ভোরের প্রতীক্ষায় হাতপাতি….!
ওইশুধু,
তুমি জানতে চাওনি বলে।

তুমি শুধু তুমি

সে আমার চোখে চন্দ্র সূর্য
সে আমার বুকের পথে প্রতিনিয়ত চলাফেরা করা অদৃশ এক মানবী..!

যাকে নিয়ে আমি প্রতিরাতে স্বপ্নে দেখি
তাকে নিয়ে আমি গল্প লিখি
তাকে নিয়ে আমি কবিতা লিখি
সে সুন্দর সরলতার প্রতিমা
অদৃশ কল্পনা বিহীন এক মানবী’
সে আমাকে রেখেছে তার
ছলনাময়ী জালে বন্ধি করে…!

সে রয়েছে আমার জীবনের সাথে মিশে
সে আমার আকাশে উড়ন্ত একটা গাঙচিল পাখি হয়ে..!

আকাশের এলোমেলো সব তারা গুলো দিয়ে
আমি তার নাম লিখতে চাই
সেই হলো তুমি শুধু তুমি মায়াবী !
আমি যার জন্য অন্তত কাল ধরে অপেক্ষায় আছি
আর সেই তুমি শুধু তুমি মায়াবী !

কবিতার কাগজ

কতরাত ভেবে রাখি, আজকের ভেবে
রাখা কালকের কাগজে উঠবে ফুটে
হায় আমার কবিতা কোথায় ?
দিনের আলোতে সে মুখ লুকায়
কোনদিন তাকে আর পাব না ফিরে।
কতরাত জেগে জেগে গড়ে তুলি
অপরূপ কবিতার দেহলতা
বর্ণিল সাজসজ্জা অলঙ্কার রূপের বাহার
সরু তার কটিদেশ, উন্নত নাসা
কোমল কপোল রেশমের মতো ঠোঁট
যক্ষ কবিতার শরীর কেবলই যায়
হারিয়ে অতল বিস্মৃতির ভিতর।
দিনরাত আমার অসংখ্য কবিতা
হারিয়ে যায়, জনারণ্যে অথবা
নিভৃতে স্বপনে।

নিস্পাপ প্রেম

তোমার লুকনো আঁচলের প্রতিটি ভাঁজে
লুন্ঠিত হৃদয়ের সংখ্যাতত্বে অনীহা আমার..
তোমার দীঘল চোখের কাঁজলের গভীরে
দেখেছি নিস্পাপ প্রেমের মৃত্যু অগণিতবার।
তোমার নিটোল দেহের ছন্দে মন্দাক্রান্তার আহ্বান
রক্তকোষে মাদকতা, অজানা শিহরণ, অবিরাম স্বগতোক্তি-
তোমার স্ফুরিত অধরের রক্তিমতায় জয়ের অদম্য স্পৃহা
চুম্বন – দংশনে রক্ত পিপাসু ইচ্ছের হুটোপুটি ।

নবান্ন

নবান্নের ব্যস্ততায় ডুবে থাকে সারা দিন
একটি একটি করে ধান, সযত্নে তুলে আনে
টন টন করে উঠে বুকের স্তন
ধূলিমলিন দেহে তখনো খোকা –
হামাগুড়ি দেয় সারাটা উঠোন!
ঘরে ঘরে সোনালী নবান্ন
বিদীর্ণ বুকে পূর্ণ-জাগ্রত কৃষাণীর স্বপ্ন
অন্তরে অন্তরে নিবিষ্ট ভাওয়াইয়া সুর, ছন্দ
দূর বহু দূর ভেসে যাওয়া মধু পিঠার সুগন্ধ!
যৌবনের বৃথা রাখঢাক কৃষাণীর শতচ্ছিন্ন বসনে
কৃষাণের শ্রম-শুদ্ধ দেহে টগবগ করে প্রেম, তীক্ষ্ণ মননে
নবান্নের সোনালী খড়ে আঁচড়ে পড়া রোদ্দুর
ক্ষণকালের জন্য দূরে ঠেলে সমস্ত অভাব; দুর্মর প্রবণে
দু জনে ভাসিয়ে দেয় একটি প্রমত্ত দুপুর।
আঁচলে আগলে নেয় নাড়ি ছেঁড়া ধন
সাত সকালে হিম ধরা শীতে বাজে দন্ত কম্পন।
বারবার গলা টেনে দেখে ঊষার প্রান্ত
কুয়াশার ধূম্র কেটে সূর্য-মামা উঠবে কখন!

অপেক্ষায়..….

আজ সুপার মুনের নক্ষত্রের এই রাতে
আলোগুলো নিভে যেতো,তবে কেমন হতো !
এই যে আমি অন্য এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি,
এ আমি নই অন্য কেউ-
এখানে কি কেউ আছে; যে কবিতা শোনাবে আজ রাতে?
আমি বদলে যেতে যেতে কেমন করে যেন
অনিবার্য ভাবে তোমার কাছেই ফিরে আসি
তুমি কি পারো আমায় একটি কবিতা শোনাতে।
স্তব্ধ সময়ের কাছে আজ প্রশ্ন নেই, উত্তর নেই,
কেবল একটি ছায়ার দেয়ালে
কিছু অস্পষ্ট জীবন রেখার আঁকিবুঁকি।
এখানে কি কেউ আছে যে কবিতা শোনাবে আজ রাতে।
থেমে যায় ঝড় কেবল থেকে থেকে
বিদ্যুৎ চমকে ওঠে দূর আকাশে,
আর কবিতা শোনার এক আশ্চর্য আকুলতা বেড়ে চলে
এখানে কি কেউ আছে যে কবিতা শোনাবে আজ রাতে…।
সন্ধ্যার নীলে ছায়াঘেরা বাড়িটা ছেয়ে যায়
শিরশির বাতাসে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ছাট এসে,
ভিজিয়ে দিয়ে যায় সন্ধ্যার মুখ,
চোখের কাজল লেপটে রাত নামে,
মোমবাতির রহস্য ছায়ার দেয়ালে তাকিয়ে থাকে একমনে
কি ভাবে; কি ভেবে ভেবে যায়-
ঝড়ো হাওয়ায় সন্ধ্যার বুক যেন তোলপাড় ওঠে,
শান্ত নদীর তীরে সন্ধ্যা তলিয়ে যায় রাত আঁধার জলে
এখানে কি কেউ আছে যে কবিতা শোনাবে আজ রাতে।

নিবিড় বন্ধন

কেমন যেন সব আজ দু’ভাগে বিভক্ত ।
ভালোবাসায় অবিচ্ছিন্ন ছিলো দুজনের আত্মা
এই প্রকৃতির সবকিছুই একসময় সুন্দর ছিলো,
একই গানের একই সুর ছিলো দুজনের অন্তরা।
একটিমাত্র নিঃশ্বাসের অপেক্ষায় এখনও বেঁচেই আছি
নিঃশ্বাসের শ্বাস আমার অজান্তেই এসে পড়বে আমারই ঘাড়ে
সাথে করে কিছু এলো চুলের মৃদু স্পর্শ !
সেই আশাতে বুক বেধেঁ এখনো পড়ে আছি পূথিবীতে।
আজ আমরা অজানা মানুষ আজ দুজনের দুটি পৃথিবী ,
অজস্র অপেক্ষায় তারই বুকে মুখ লুকিয়ে সহস্র অভিযোগ
আর অভিমান প্রেমময় সংসারে ছিলো এতদিন,
তার স্পর্শ পেতে আজ এই মন যে বড়ই ব্যাকুল।
বারবার ফিরে আসে কানে সেই মৃষ্টিভাষী কন্ঠস্বর
সেই লাস্যময়ী সেই চোখ সেই আবেগ সেই দূষ্টি।
হয়তো বেশ আছি একা একা নেহায়েত মন্দ নেই
তুমিও তোমার মতো করে বেশ আছো-জানি,
সাবলীল কেটে গেছে অনেক বসন্ত , অনেক
কষ্ট হয়তোবা ছিলো আনন্দওবা কম কী ছিলো কিসে?
কথা আর অ-কথায় ভালবাসার রাজ্যে আমরা দুজন প্রেমী
শুধুই প্রেমে সময় যেত হারিয়ে একই জীবন তীরে নিবিড় বন্ধনে
আজ ওপাড়ে তুমি আর এপাড়ে আমি নিস্ব হয়ে করি যন্ত্রনাবাস।

সংকেত

সামনে দাঁড়িয়ে, ও দাগ
পাবেনা দেখেতে
মুখের দাগ নিয়ে ভেবে সারা হ’চ্ছো ?
বুকের গভীরে যে দাগ বেঁধেছে বাসা,
চেষ্টা ক’রলে দাগ কে চিত্রিত ক’রে
আঁকতে পারতে কোনো এক গুহাচিত্র।
আগামীর কাছে রেখে যেতে পারতে
কোনো এক সংকেত….।
লাবন্য

চোখে বৃষ্টি নামবে জানি,
আগুনের তপ্ত শিখা শীতল সাগর ছোঁবে,
ধ্রুব তারা তখন খসে পড়বে, শেষ হবে
অন্তিম যন্ত্রনা, একতারায় ছুঁয়ে থাকবে জীবন।
কী ভীষণ অনশনে কেটে যাচ্ছে ক্ষণ,
সহস্র কাহিনীর স্মৃতিটাকে ঠাঁই দিলাম-
সেই অবুঝ হৃদকাশে। অচিনপুরের দেশে।
সাদা মেঘের লাবণ্য মুছে গেছে সহসা
মনের সিঁড়িতে খেলে যায় অস্থিরতা।
বাঁচার অভ্যেস আমাকে বাঁচিয়ে রাখে
ঋতুর বৈরিতায় অভ্যস্ত এই আমি,
হৃদয়ের দেয়ালে মন রেখে ভাবি
শত অতীতের মাঝে তোমার মুখ খানি।
মসৃন তোমার আলগা হাতের ছোঁয়া
দূর আদিগন্তে মিলেমিষে একাকার
বোবা আকাশ, অবুঝ পৃথিবী, একা আমি।
বরণ

চেয়েছি পাশে
সাগরের প্রবল ঢেউয়ের ছন্দে ।
সূর্য ডোবার শেষ সাক্ষী হয়ে
বরন করতে চেয়েছিলাম তোমাকে
উৎসবের মধু-ময় সময়গুলি
উৎসর্গ করেছি তোমাকেই।
তোমাকেই চেয়েছি তোমার উচ্ছ্বাসহীন
অন্তরে বিতাড়িত হয়েও,
তোমার তীব্র প্রত্যাখ্যান তোমাকেই পেতে
আমাকে প্রেরণা জোগায়।
আমি কখনোই তোমার অনীহার বিপরীতে
জোর করে চাইনি তোমায় ।
অনন্তহীন সময়ের সাথী হিসেবে তোমাকে চেয়েছি
মুক্ত আকাশে মেঘের খেলায় ,
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের কাছে চেয়েছি তোমায়
রক্ত তারুণ্য শুধু তোমাকেই কেন
আমার সন্মুখে বারে বারে দাঁড় করায় ।
বিধ্বস্ত মননে তোমার সরব উপস্থিতি
আমার মনের বিদগ্ধ অনুভবে চিরঅম্লান।
নীরবে ঘুমাও তুমি চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে
রাতের নির্জনতায় একাকী আমি প্রহরে গুনি।
তোমাকে চেয়েছি দহন পীড়নে শ্রান্ত আমার
ক্ষণিক চেতনার পূবআকাশে।
অরণ্যের রূপে নীল সবুজের ঠিকানায়
শুধু তোমাকেই চেয়েছি আমি
তোমার আমার হৃদ-কাব্য রচনার প্রাক্কালে ।

যন্ত্রণা

প্রতিটি ক্ষণে, প্রতিটি মূহুর্তে
হাসিমুখ, হাসিমুখে আনন্দধারা।
তুমি চেয়ে আছ তাই, আমি দুরে চলে যাই,
বহুদুর, বহুদুর চলে যাই।
চাদঁ উঠে গেছে নীল আকাশে
জোৎস্না এসে থেমে গেছে তোমার জানালায়,
হারিয়ে যেতে চাই, তোমার মনের আঙ্গিনায়.
হারিয়ে যেতে চাই, তোমার ভালবাসার ভাবনায়
অনেক স্বপ্নের ভীড়ে একান্ত নিরবতায়,
আনন্দ উৎসব আছো তুমি সবার সাথে
শুধু নেই আমি তোমার কাছে……
তুমি চেয়ে আছ কোন দুর অজানায়,
আমি খুজে ফিরি শুধু তোমার স্মৃতির যন্ত্রনায় …..।

তুমি কি আসবে না ?

বাতাসে উড়িয়েছ আশা,
মাটিতে ছড়িয়েছ আশ্বাস,
সমুদ্রের ঢেউএ জাগিয়েছ আবেগ,
আর সবুজ বনানীতে প্রেম ।
আশা, আশ্বাস, আবেগ, আর প্রেমে ভেসে ভেসে
আমি তাই শেষ ট্রেনের পথ চেয়ে রোজ ।
আজও শেষ ট্রেন হুইশেল বাজিয়ে চলে গেল
তুমি নামলেনা,
কাল নয়, পরশু নয় ,কিম্বা তার আগের দিনও না,
তুমি কি আসবে না?
ধর যদি নাই আসো, চিঠিতো দেবে?
ধর যদি চিঠি নাই দাও, ফোন তো করবে?
ধর যদি ফোন নাই কর, ভুলে তো যাবে ?
কিন্তু তুমি ভোলনি…….।

মুক্তি

চাইলেই কি কাউকে ভুলে যাওয়া যায়
হয়তো যায় আমি ভুলে গেছি তোমায়
শুধু কিছু স্মৃতি রয়ে গেছে মনের মাঝে
হয়তো এই স্মৃতি গুলো একদিন ভুলে যাবো
ভুলতে না চাইলেও ভুলতে হবে যে আমাকে
কেন জানো স্মৃতি গুলো আর
থাকতে চায় না আমার কাছে
আমাকে মুক্তি দিতে চায়
তোমার এই স্মৃতি গুলো ।
জানো কেমন করে জানি
তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো জেনে গেছে
আমি আর বেশী দিন নেই এই ধরণীর বুকে ।
তাই ওরা আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চায় বার বার ।
কি অদ্ভুত দেখো আমি এতটা দিন
তোমার স্মৃতি গুলো বয়ে বেড়িয়েছি
আজ আমি কারো কারো কাছে হারিয়ে যাওয়া
একটা স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবো ।
কি অপার লীলা-খেলা এই ধরণীর ।
কোন অপবাদ আমি দেবনা তোমাকে
মুক্ত করে দিয়েছি তোমাকে আমি
আমার হৃদয়ের গহীন আর লুকিয়ে রাখিনি তোমাকে ।
অনেক আগেই তুমি চলে গেছো
তবুও আজ অরেকবার বললাম যত দূরে যেতে চাও
চলে যাও বাঁধা দেব না আমি…..।

অসমাপ্ত কবিতা

বারুদের স্তূপে বসে আকাশের গান শুনি
মধ্য নিশীথে ধ্রুবতারার সাথে সদ্য উৎপাতিত তারাদের গুনি
সংযম আর কত, কত ফুল অকালে ঝরলে এ মরণ খেলা সাঙ্গ হবে!
হয়তবা আমার ও মরণ সলিলে,
নীরবে পৃথিবীর বুকে পরে থাকবে শুধু আমার পদ চিহ্ন
সাহুকারেরা আমার শরীর টাকে করবে ছিন্ন ভিন্ন
আবার কেউ নন্দিনী হবে, আবার নতুন অঙ্ক কষবে
জীবনের অসমাপ্ত কবিতা পুনরায় লিখবে।

অনির্বাণ

বেরিয়ে পড়ল অনাদ্রিতা
ঘন অন্ধকারে পাশের মানুষটাকেই চেনা যখন দায়,
তখনি তুলসি তলায় বাতি দিয়ে গেল সময়।
ঝোড়ো বর্ষায় ভেজা বঁড়শিতে মাছ তুলেছে অনির্বাণ।
ছিঁড়ে যাওয়া পাতার ওপরেও অনায়াস বসে থাকা পিঁপড়েটা
আঁকড়ে ধরল বুক।
রক্তপাতের অপেক্ষায় বসে থাকা আর একজন
সরিয়ে নিল থালা।
আজ আর আহারের প্রয়োজন নেই,
রক্তপাতে পূর্ণ হয়েছে জীবন।
অজস্র ঢেউ জলের কাছে
কী যন্ত্রণায় মরছে আহা ! নদী !
চৈত্রবাতাস, তুমিও পোড়ো
ধুলোর উঠোন থমকে দাঁড়ায় যদি…
হৃদয় জুড়ে বৃষ্টি তুমুল
আমি তবু আকাশে মুখ ঢাকি
যখন তুমি পোড়াও, পোড়ো ;
দহনজ্বালায় চুপটি করে থাকি।

নিয়ে চলো

এক আকাশ ওড়না ভিজিয়ে
চমকে দিতেই, কণ্ঠস্বরে ভেসে এলো আদিম তান।
একলা হওয়া এমন দিনে যে সুর উঠলো বেজে
অভিমানী হাওয়ায় দিলেম তাকে ভাসিয়ে…
বলেছিলাম, খুঁজে নিয়ে এসো রঙ্গীন ঠিকানা।
কালো চুলে হাত বুলিয়ে বললাম…
নিয়ে চল আমায় মেঘের গভীরে,
তোর গভীরে, আলোছায়া বাসে মেঘ বলেছিল
এখন প্রদীপ নিভু-নিভু,
আর তুই জানালি, নিভে গেলেই যে অন্ধকার,
তার ওপাশে ভাললাগার গান নাকি আরও সুন্দর।
আমি ডুব দিলাম তোর গভীরে…
বৈঠা ছাড়াই।

কুমারী গর্ভবতী

মেঘ বারবার বল্লো আকাশকে –
আমি জানি কে আমায় গর্ভবতী করল,
মুক্ত আকাশের এক কোনে নেমে এসেছিল
খন্ড খন্ড শুভ্র মেঘের ভেলাগুলো…..
আকাশে উড়ছিল নানা রঙের পাখি ছন্দহীনের মত
দুপুরের কড়া রোদ হাতছানি দিচ্ছিল বিকেলকে
হঠাৎ নেমে এল সন্ধ্যা তার মোহনীয় রূপ নিয়ে
ঠিক তখনি মেঘটা লজ্জাহীনা হয়ে গর্ভবতী হল ।
ঝড়ে পড়লো সীমাহীন এই পৃথীবীর বুকে….
সব ধুষিত রক্ত ধুয়ে দিয়ে পবিত্র করে দিল এই ধরাতলকে…
পাপ মোচনের উছিলায় ঝর ঝর বৃষ্টি নামলো।
নিবিড় স্নেহবন্দী হয়ে মেঘ ভুলে গেল তার কুমারীত্ব!
জীবনের কলঙ্ক রয়ে গেল তার সীমান্ত জুড়ে ঠিক হৃদয়ের মধ্যখানে
সমাজ ছিঃ ছি করলো, নরম সকালের রোদটাও এড়িয়ে গেল মেঘকে
শুধু আকাশের বুকে নানা রঙের পাখিগুলো তখনও উড়ছিল
উড়ছে আর মেঘকে মুচকি হেসে বলছে
এস মেঘ তুমিও পাখি হয়ে যাও,
গর্ভবতী হবার ভয় থাকবে না……..
সীমাহীন লজ্জা তোমার থাকবেনা
মানুষ মানুষকেই লজ্জিত করবে
সত্য প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো ……।

মাশুল

সত্তা আর অস্তিত্ব মিলে
হৃদয় আগুনের ফুলকিতে খুঁজি চরম আপেক্ষিকতা,
মন মাতানো প্রলোভনে
দুঃখের পরিমাপ শনাক্ত করতে গিয়ে
ছন্দের কাশবনে হেলে দুলে ভুলের মাসুলে নিজেকে হারাই।
মনের কৌশলে তোমার অস্তিত্বে ফোটে রাতপদ্ম
শরৎ এসেছে স্বপ্ন বিষন্নতার আড়ালে
সংগোপনে তুমি সমৃদ্ধ করেছো
সীমাবদ্ধতার অবাধ্যতা।
আমি সামাজিক জাতাকলে
বাকি সত্যতার কাছে রাখি মনষ্কতা
হৃদ বন্ধনের তত্ত্বমিল তোমার অজান্তে
করে বিরল দস্যুতা বেলাশেষের গানের কলি
গেয়ে ওঠে গৌধুলির পাখি।
প্রেম তোমার মোহের কাছে আমি হার-মানিনি
শর্তমেনে ভালবাসার ঘাটতি পূরণে
তুমি আবেগের ভাগ বসাও
আমার হৃদয়ের কোনে।
নৈঃশব্দের দুঃখ অবসাদে
সন্ধ্যা ও প্রভাত ধরা দেয় মনে
একাকিত্ব বোবাস্বরে বেদনার ঘরে
বাজেয়াপ্ত করে দ্বিধার তুলনা
তুমি শংকামুক্তির বিফলে
প্রেমের কপালে লিখো আমার ভবিতব্য।

প্রথম আলো

একফোঁটা অন্ধকারে কতটা ক্ষত সারে…
চক্রবৃদ্ধি হারে,
একাকিত্বে ক্ষয়ীষ্ণু হৃদয় গুমরে কাঁদে-
কষ্টরা নিঃশ্চুপ পায়ে এসে
কড়া নাড়ে মনের দুয়ারে
প্রবঞ্চনা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়
হৃদপিন্ডের জীবনী শক্তি।
এভাবেই শুরু হয় কবিতার প্লাবন
আর বিবর্ণ নদী জুড়ে ভেসে চলে
গ্রাম্য কবিদের মৃতদেহ…
যেন চির দোসর হয়ে আছে অনন্ত কাল,
থাকুক ক্ষতি নেই আর আজ।
যা হয়ে যায় ভাদ্রের গর্ভিনী নদী ।
একগলা জলে দাঁড়িয়ে
ভিক্ষা চাই তোমার কাছে দেবী,
দাও গ্রাম্য কবিতার ভাষা ।

বেলাশেষে

সত্তা আর অস্তিত্ব মিলে
হৃদয় আগুনের ফুলকিতে খুঁজি চরম আপেক্ষিকতা
মন মাতানো প্রলোভনে
দুঃখের পরিমাপ শনাক্ত করতে গিয়ে
ছন্দের কাশবনে হেলে দুলে ভুলের মাসুলে নিজেকে হারাই।
মনের কৌশলে তোমার অস্তিত্বে ফোটে রাতপদ্ম
শরৎ এসেছে স্বপ্ন বিষন্নতার আড়ালে
সংগোপনে তুমি সমৃদ্ধ করেছো
সীমাবদ্ধতার অবাধ্যতা।
আমি সামাজিক জাতাকলে
বাকি সত্যতার কাছে রাখি মনষ্কতা
হৃদ বন্ধনের তত্ত্বমিল তোমার অজান্তে
করে বিরল দস্যুতা বেলাশেষের গানের কলি
গেয়ে ওঠে গোধুলির পাখি।
প্রেম তোমার মোহের কাছে আমি হার-মানিনি
শর্তমেনে ভালবাসার ঘাটতি পূরণে
তুমি আবেগের ভাগ বসাও
আমার হৃদয়ের কোনে।
নৈঃশব্দের দুঃখ অবসাদে
সন্ধ্যা ও প্রভাত ধরা দেয় মনে
একাকিত্ব বোবাস্বরে বেদনার ঘরে
বাজেয়াপ্ত করে দ্বিধার তুলনা
তুমি শংকামুক্তির বিফলে
প্রেমের কপালে লিখো আমার ভবিতব্য।

মায়াবী স্রোত

কী অসম্ভব নেশা জড়ানো
কী নির্লিপ্ত চাহনি শান্ত মাধুর্য
যেন এক প্রেমময় মহাকাব্য ।
কখনও মনে হয় আনন্দের ঝর্ণা ধারায়
অনিন্দ্য সুন্দরী প্রণয়িনী ।
আবার কখনো বেদনায় ভরা মায়া মাখানো
এক বিষাদ সিন্ধু।
হোক নিশ্চিত তোমার চোখে আমার সমাধি
কল্পনার দৃষ্টির সুখকর কামনায়।
অমরত্বের বর চাইনা আমি-
অসম্ভব সুন্দরের গভীরতায় নিজেকে বিসর্জন
দিয়ে অপ্রাপ্তির সুখ নিতে চাই ।
নীল সাগরের অতল গভীরতায় নির্বাক
নিষ্পলক চোখের তারায় যেন হৃদয়ের পিপাসা
ঠিক যেন অনির্বচনীয় অমৃতের আহ্বান
নীরব চাহনীর মাঝে যেন উত্তাল কোলাহল
দু’চোখের পল্লবে।
তোমার নিখুঁত দৃষ্টির স্বচ্ছ সলিলে
জীবনের না পাওয়া সব আকাঙ্ক্ষা মিশে যেতে উন্মূখ,
সম্বিত ফিরে পায় বদ্ধ মাতালের নেশা
থমকে দাঁড়ায় পাষাণ হৃদয়
তোমার চোখের পানে চেয়ে স্নাত আঁখি পল্লবে।
অশান্ত ঝড় থেমে যায় হঠাৎ
তোমার চোখের মায়াবী স্রোতে
চকিতে যৌবন উশৃংখল হয়
এক পলকেই ।

সময়ের সীমান্ত

আমার জন্যে সময়ের সীমান্ত
অতিক্রান্ত করা বড় কষ্টের
আটকে আছে শক্তমতো
সময় আমার কোথায় যেন।
মৃতপ্রায় জীবনের স্মৃতির গ্রন্হিগুলি
শিথিল হয়ে অবশ করে ফেলেছে আমায় ।
সচল পৃথিবী থেকে কে যেন বিচ্যুত করেছে
আমার রথের চাকা গেছে থমকে।
আমার সময় আজ স্থির অবিচল
হিমালয়ের দৃঢ়তায় সামনে দাঁড়িয়ে
নিজেকে আজ বেশী অসহায় মনে হচ্ছে
সুদুরে হারিয়ে যাওয়া তোমাকে খুব বেশী
মনে পড়ছে।

তুমি কি পারবে না

তুমি কি পারবে না স্বর্গের অপ্সরী
ফিরিয়ে দিতে ভোরের আলোয় ¯স্নাত শিশির ?
বলো আর কতকাল রাখবে এভাবে
কতটা প্রহর থাকব আমি নিদ্রাহীন ?
না-কি সুখের ছোঁয়ায় তুমি চেয়েছ
আমি পাথর হয়ে থাকি ?
মনে পড়ে তোমার স্বর্ণ খচিত মানচিত্রে কিছু স্বপ্ন
তৈরী করেছিলাম মধ্যরাতে তুমি আর আমি-
অাজ হৃদয়াকাশে বৃষ্টি ভেজা মলিন পৃথিবী
আমি সবুজ ঘাসে একখন্ড পাথর হয়ে আছি।
ঝাঁক ঝাঁক বলাকারা ওড়ে যেত
সবুেজর প্রান্ত সীমায় ঘন কুয়াশায়।
চোখের তারায় ছিল তোমার আকাশের সবটুকু নীল
সেই নীল তুমি আজ তুচ্ছ করে দিয়েছো বিলীন….।

বলতে পারো কবিতা

কবিতা তোমার চুলে শ্রাবনের মেঘ জমে আছে
জোসনারা ছেয়ে গেছে মেঘের নিকষ অন্ধকারে
হারিয়ে গেছে অতলান্তে জীবনের কুল।
যদি পুর্নিমা ছুঁয়ে যায় এই রাতে, জানি ঠিক
ফিরে পাবে মেহনার ঘাটে ।
এখন আমি আর কাঁদিনা শরতের রাতে
সারারাত গায়ে মেখে বৃস্টির জল
ব্যর্থ মন কালো মুখ হয়ে
ফিরে যায় কষ্টের দলে।
অশ্রুরা স্নান শেষে হেসে ওঠে
দিনের আলোয়।
কবিতার মাঝে শরৎ মেঘের জড়াজড়িতে
সাজঁবেলায় কেশের চুড়ায় মেঘের বাড়ীতে
সৃষ্টি খেলায় শরৎ নামে গোপন সন্ধিতে।
ওগো তুমি কি গিয়েছো আকাশপুরে ?
তোমার দেহে কেন এত শরৎ নামে
বলতে পারো কবিতা !

মেঘলা প্রহর

মেঘলা প্রহর প্রহর দুপুরে শ্রাবনের ধারা বরষে,
কৃষ্ণচূড়া ঝরে সমাধি পরে বেলাশেষে।
নিভৃতে আনমনে ঝরে ঝরে গেছে ফুলেরা,
একেলা বউ কথা কও ডেকে ডেকে দিশেহারা।
মউ মউ ঘ্রাণ সরিষা ক্ষেতে হলদে বরণ দুপুরে,
গাঙ ফড়িং এর চঞ্চল নাচ শাপলা-কমল এর পুকুরে।
ঘাসের চাদরে টলমল বৃষ্টিজল মাতোয়ারা,
জলের আয়নায় আকাশের ছায়া, মুখ দ্যাখে গাছেরা।
শুকনো পুষ্পবৃন্তে লেগে থাকে ফুলকুঁড়ির আশা,
ফুরায় প্রেম, সব চাওয়া-পাওয়া,
ফুরায় না ভালোবাসা।।
আগামীর উপহার

ফেরিওয়ালী সেজে ফেরি কর তোমার যৈাবন
দুটি স্তনের মাঝে গভীর উপত্যকার নির্জলতায়,
বুক খুলে হাসে কত নিষ্ঠুর হায়নারা
নিরুপায় তুমি, যোনীতে যোনীতে
গেঁথে রেখেছো চকচকে বর্শার ফলা,
প্রতিরাতের হিংস্র উম্মাদনায় প্রেমহীন উৎসবে
তোমার রষায়িত রজনীগন্ধায় লাগে রক্তের ছিটা।
নিশ্চুপ ভাবে সহ্য করে যাও, ঠোটের কোনে হাসির রেখা টেনে
যে হাসিতে রয়েছে শুধু ছলনা বিদ্রুপ অসহ্য যন্ত্রনা;
মিশে থাকে ঔরসের উপহারের রসায়নে
তুমি কুমারী হয়েও নশ্বর করে ফেলো তোমার যোনীদেশ ।
সঙ্গম শেষে বাথরুমের কুৎসিত আয়নাকে গিয়ে প্রশ্ন করো
এ তুমি কোন তুমি ?
কুমারী ? সধবা ? বিধবা ? নাকি নেহাতই মেয়েছেলে ?
তুমি কুমারী তবু অনাঘ্রাতা নও
শোধ করো নারী জন্মের পাপ
রোজ অতীত হয় তোমার বেঁচে থাকা ।
নিষিদ্ব পল্লীর মরচে পড়া জানালায়
মুক্তি চাও মুক্তি খুজো প্রতিনিয়ত…..
চোখে পড়ে শুধু অশ্লীল কাম , আবিষ্কার করো
মরচে পড়া সেই জানালায় তোমারই প্রতিবিম্ব ।
কত রাত জাগা যুদ্ধের প্রহার ছেয়ে আছে শরীলে তোমার
কত সফল যুদ্ধের স্মৃতি ঘুমোট ঘরে আছে ছড়িয়ে
কলি হয়ে জমা হয়েছে কত শত বেদনা তোমার নারী গর্ভে
কোন কলিকেই তুমি দাওনি ফুল হয়ে পরিস্ফুটিত হতে
কত নিশ্বপাপ কলিকেই ঝড়িয়ে এসেছো নির্বিবাদে
কোন এক নাসিংহোম এর ক্লিনিকে ।
দু ঊরুর মাঝে কতবার চালাতে দিয়েছো তুমি?
মূল্য হিসাবে পেয়েছো একটি কন্যা সন্তান , যে কিনা
হবে ‘আগামীর তুমি’ তবে
কুমারী জীবনের যন্ত্রণা ওকে দিও না
উপহার দিও তোমার আগামীকে
তার সম্পূর্ণ নিজের একটা পুরুষ
যাকে মর্জি মাফিক ছিন্ন ভিন্ন করতে পারবে ।

মনে পড়ে

জীবনটা অপূর্ণতার
আঘাতে হোচট খায় বারবার ৷
বিশ্বাস করো প্রিয়তমা তোমাকে ঠিক
ততোটাই ভালবেসেছিলাম, অনেকেই এর
আগে পারেনি কেউ ।
জানি না কতটা নেশায় চূড় হয়ে আছি আমি ৷
হয়তো অ্যালকোহলেও অতটা মাদকতা নেই,
যতটা ছিল তোমার প্রেমে ৷
তুমি আসবে বলে আমার প্রতিটা প্রহর কাটে অপেক্ষায়,
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ লগ্নে, আজ ভীষণ ভীষণ ভাবে
মনে পড়ছে তোমাকে, শুধু
তোমাকেই…।
আমার মৃত্যু

আমার লাশের পাশে রাখা
আগরবাতির ঘ্রাণ,
তোমাকে ঘুমাতে দিবে না,
তুমি ঘুমাতে চাইলেও পারবেনা,
আমার স্মৃতি গুলো চারিদিকে শুধু,
তোমায় ডাকবে।

এই ভাবে কেটে যাবে
বছররের উপর বছর খানি,
একদিন তুমি বুড়ি হবে,
তোমার চুল পাকা ধরবে,
তোমার হাতে লাঠি থাকবে,
একদিন তুমি ফিরে এসো সেই পথে,
যে পথে আমার মৃত্যু হয়েছে।

তখন হয়তো তুমি মুক্তি পাবে,
আমার আত্মার স্বাদ মিটবে,
আমার আত্মা হবে তখন মুক্ত,
আমি থাকবো অপেক্ষায়
পরো জনমের জন্য।

এই জনমে তো তুমি আমার হলেনা,
পর জনমে মনের মানুষ হয়ে,
দুজনে আবারো জন্ম নিবো,
এই সুন্দর পৃথিবীতে।

ভরবে না মোর মন

ইট পাথরের রুক্ষ প্রান্তর ধরে হাঁটছিলে তুমি,
নিশ্চিন্তে, সাবলীল পদক্ষেপে।
ধুধু নির্জন পথ,
দুপাশে আকাশ ছোঁয়া ইমারত,
বিষন্ন সূর্যটা দেখছে তোমায় আক্ষেপে,
বুঝিবা তোমায় প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে।
দেখেও দেখলে না তুমি আমাকে,
হয়ত পথের আবর্জনা ভাবলে।
তারপরই থেমে গেল পদক্ষেপ,
নিশ্চিন্ত সাবলীল পদক্ষেপ।
অঙ্গে তোমার বাঁশীর সুর, সুরেলা যৌবন,
আঁচলে ছড়ানো মিষ্টি নিক্কন।
আঁচল টানলে তুমি ভাল করে-
আরো ভাল করে।
ভাবছ বুঝি হিসেব মেলাব?
আঘাতে আঘাতে ভাঙ্গবে তোমার বাঁশীর সুর?
নিশ্চিন্তে হেঁটে যাও সুরেলা।
তোমার ভালবাসা আমার
জীবন ভরাতে পারেনি,
তোমার দেহে আমার
মন ভরবে না।
মরুভূমির ন্যায়

প্রেমহীন জীবন যাপন,
মরুভূমিতে রাত্রিবাসের মতন,
অসহনীয়,ঝঞ্ঝা লাঞ্ছিত যেমন।
নবযৌবনের এত উদীয়মান কবি,
লিখে চলেছেন তাঁদের কবিতায়,
তাঁদের মনের কতনা প্রেমের ছবি,
সে মন কি ফিরে পাব এখন,
যতোই নিজেকে তরুণ ভাবি।
তবু প্রেম তো রয়েছে মনে,
রেখেছি সযতনে ও সঙ্গোপনে,।
কুয়াশা যতোই পরিণত হোক ,
আশ্রয় নেবে ঐ মেঘেরই বুকে,
নব-উদ্দমে বৃষ্টি রূপে আসবে ফিরে,
আবার কুয়াশার জন্ম হবে ।
আমিও কুয়াশা মেঘের মত,
প্রেমেই ডুবে রয়েছি অবিরত।
প্রকাশ পাবার নেই অবকাশ,
হৃদয়ে যে রয়েছে নীরবে ,
পাই না সেই আশ্বাস।
প্রেম নাকি জীবনে আসে একবার,
তাই প্রথম প্রেমই প্রেম,আর সব মেকি,
কিন্তু সেটাই প্রকৃত সত্য কি ?
আসলে সব প্রেমই প্রেম যতবার আসুক,
এ তো নয় কোন হুজুগ বা অসুখ।
প্রেম স্থির,সুন্দর,অখন্ড,জীবনের স্বাক্ষর,
জীবনই তো প্রেমময়, তাই চিরভাস্বর।
কেবল মানুষেই নয়,এ যে প্রকৃতিময়,
তাই সর্বত্রই দেখি কেবল প্রেমেরই জয় ।

সুযোগ করে দাও

সব দুঃখ, লজ্জা উড়িয়ে দিয়ে
সবুজ গালিচা বিছাতে চায়
ওকে একটু সুযোগ করে দাও।
পাহাড়ি ঝড়ো হাওয়া
তোমার জানলা খোলার অপেক্ষায়
ওকে যাওয়ার পথ করে দাও।
জমাট হয়ে থাকা পুঞ্জিভূত বেদনাগুলো
উড়িয়ে দিতে চাইছে
কোনদিন সূর্য আসেনি ঘরে,
ওকে একটু সুযোগ করে দাও
ভেতরে জমে থাকা বরফ
যা দিনে দিনে হিমবাহ হয়েছে
ধুলোর পরতে জমাট হয়ে থাকা
জানলার কপাট দুটো খোল।
জানি খুলতে খুব কষ্ট হবে তোমার
ঘরের ভেরতটা ভীষণ ঠাণ্ডা, নিরুত্তাপ
সূর্যকে যেতে দাও তোমার ঘরে।
পুজারিনী

অন্য এক দিক… ভূমিকম্পের প্রস্তুতি,
পুজারিণী সদ্যস্নাত এলো চুলে মৃদু হেসে
নোনা শরীরে আহ্বান জানালো আলিঙ্গনের।
দূরবর্তী এক নদীর স্রোত, উচ্ছ্বল ঝরনার মত
ঝাপিয়ে পড়লো গায়ে, পূজারিণী ভিজল,
কিন্তু তার বসন ভিজল না।
এক লপ্তে সমস্ত দ্বিধাকে পিছনে ফেলে
হাঁটতে সেখায় পূজারিণী, গোপন সময়ে
কিম্বা নিকষ কালো অন্ধকারে,
বনাঞ্চলে পূজারিণীর একক আগমন
নীরব বনাঞ্চলে তার অধিবাস।
বিজিত আর জয়ী তফাৎ খুঁজে ফেরে তার বুকে।
অবলীলায় জীবনের সুক্ষ্ম বোধ কাঁপিয়ে তোলে বুক।
তিরতির করে কাঁপতে থাকে ঠোঁট।
কিছুকাল পরে নদী এসে দাঁড়ালো তার সম্মুখে,
নদীর আহ্বান… ছটফটে নদী বলেছিল
‘এসো, আজ ভেজাই তোমায়, সম্পূর্ণ স্নানে।
আপাত ছলনায় স্মিত হাস্যে পূজারিণী অস্বীকার করল
পুজারিণী উত্তরে বলল,
‘এ স্নানে আর ইচ্ছা বেঁচে নেই, ছিটানো জলেই যে ভিজেছি মনে মনে।’
পূজারিণী আবার পিছু ফিরে, মিশে গেল বনান্তরে,
নদী তার গন্ধ এখনও পায়,
স্নাত হয় নিঃশ্বাসে, তবু নাগাল পায়না তার।

সেই কবে থেকে

পৌরাণিক যুগে শুরু হয়েছিলো জানিনা
পাতায় পাতায় রং বেরং এর উজ্জ্বল কাহিনী
আমি এখানে বড্ড বেশী বেমানান!
হাত বাড়ালাম অচেনা এক কাব্যের পথে
বর্ণময় শব্দের ভিড়ে আমার ভাঙা কলম কালিহীন
শব্দহীনের মাঝে খুঁজে পাচ্ছি না নিজেকে
মনে পড়ছে না আমার পূর্বজন্মের কথা
আমি কি চর্যাপদ থেকে এসেছি?
পদাবলী? না কি? মঙ্গল কাব্য?
তা আমি জানিনা
নিজেই এসেছি নাকি কোন পথভোলা মন
আমাকে নিয়ে এসেছে এখানে
সামনে রোদের ঝলমল মলাটে
এক বিশাল কাব্য গ্রন্থ
ফিরে যাওয়ার জন্য পিছু ফিরতেই দেখি
যে ধুঁসর পথ ধরে এসেছিলাম
কোন এক ছলনামযীর গুপ্ত মন্ত্রে তা উধাও,
সেখানে প্রাগৈতিহাসিক নিকোষ গাঢ় অন্ধকার
দ্বিতীয় কোন পথ নেই আর
আমি ছুটে চলেছি অনন্তকাল
কোন গন্তব্য নেই।

ভালোবাসা কারে কয়?

আক্ষরিক অর্থে বলতে গেলে, নর-নারীর মধ্যে যখন সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ ও পরস্পর শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক থাকে, যার প্রতি নির্ভর করা যায় নিশ্চিন্তে, পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, দুজন দুজনকে আঁকড়ে থাকতে চায়, একে অন্যের জন্য প্রতীক্ষা করে, দেখার আকুতি থাকে, কাছে পাওয়ার আনন্দে পাগল হয়ে যায়, দুজনে দুজনাতে মুগ্ধ…এরই নাম প্রেম বা ভালোবাসা। যে অনুভূতির জন্য সব সুখ, শান্তি, ঐশ্বর্য, পরিচিতি, সমাজ, সংসার সব ত্যাগ করা যায়। সম্মান-অসম্মানের পরোয়া থাকে না। আবার দুজনার মধ্যে যদি কখনো ভুল-বোঝাবুঝি হয় বা দূরে থাকতে হয়, তখন খুব কষ্ট হয়। বিরহ ছাড়া ভালোবাসা অনুভব করা যায় না। মনে হয় যেন তাকে ছাড়া আর বাঁচব না। এই যন্ত্রণার নামই ‘ভালোবাসা’! বুকের মধ্যে আগুন জ্বলতে থাকে। যে কখনো এই যাতনা সয়নি, সে ভালোবাসার মর্ম বোঝেনি।
তাই তো রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
“সখী, ভালোবাসা কারে কয়!
সে কি কেবলি যাতনাময়।”

যে ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকে না,সীমা থাকে না সেই ভালোবাসা হচ্ছে সত্যিকারের ভালোবাসা।যেমন সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা।সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো কারো কাছে মাথা নত করে না। হাজার কষ্ট হলেও তারা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না।যত কষ্টই হোক না কেন সে তার ভালোবাসাকে আপন করে নিবেই,এবং তার এ ভালোবাসার জন্য যে কোনো ত্যাগ শিকার করবে। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা।বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়।আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়,বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিস্কাম ভালোবাসা।আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে, যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় সময় খুবই আনন্দদায়ক হতে পারে,আর অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা।

সত্যিকারের ভালোবাসা হলো তাই, যে ভালোবাসা আপনাকে দুরে যেতে দিবে না, কিন্তু কাছে থাকলে ছোট ছোট ঝগড়া, দুষ্টুমি, খুঁনসুটি চলতেই থাকবে।আসলে পূর্ণাঙ্গ ভাবে আমি ভালোবাসার মানে জানিনা। তবে ভালোবাসা মানে মনে হয় এরকমই, কাউকে দেখে ভালো লাগা,কাউকে মন থেকে বিশ্বাস করা,তাকে না দেখলে ভীষন কষ্ট পাওয়া,তাকে এক নজর দেখার জন্য মন ছট ফট করে আবার দেখা হলে মুখে কথা আটকে যায়,তার জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে,তার কষ্টে নিজের কষ্ট হয়,এরই নামই মনে হয় ভালোবাসা। ভালোবাসা মানে ফিলিংস, অপ্রকাশ্য অনুভূতি। কেউ বলে ভালোবাসা সীমাহীন তাই একে ভাঙ্গা যাবেনা এক শব্দে,এটা হচ্ছে উপলব্ধির ব্যাপার।খুবই আচার্য লাগে যখন দেখি এই ভালোবাসার জন্য কেউ তার ফ্যামিলি ত্যাগ করে,বন্ধুদের ত্যাগ করে। ভাললাগে এই কারণে যে ভালোবাসার শক্তি আসলে অপরিসীম। তা না হলে সবচেয়ে কাছের মানুষদের কিভাবে ত্যাগ করা যায় শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণে? প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা আমার কাছে কিছুটা আজব মনে হয়। একজনের প্রতি ভাললাগা আসতেই পারে কিন্তু তার জন্য আমার সারাটা দিন ব্যয় করা, তার সাথে ভালোবাসার ফিলিংস শেয়ার করা, রাত জেগে মোবাইলে কথা বলা, ছুটির দিনে ঘুরতে বের হওয়া ইত্যাদি এসব কনসেপ্ট আমার ভাল লাগেনা। সবচেয়ে যে ব্যাপারটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তা হল অন্যের প্রতি আমার ফিলিংস কিভাবে আসিতেছে? আমি কি তার ক্যারিয়ার,স্মার্টনেস, আউটলুক দেখে ভালোবাসার প্রতি আকর্ষি হচ্ছি? নাকি অন্য কিছু? যদিও যারা প্রেম করে তাদের কাছে এই প্রশ্ন করলে তারা বলে, ওর মনটা অনেক ভাল, তাই ওকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু তাদের প্রেমে পড়ার কাহিনী শুনলে দেখে যায় তারা কখনও মন দেখে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। তাদের প্রেমে পড়ার ইতিহাস থেকে দেখা যায় কেউ কোন অনুষ্ঠানে গিয়েছে সেখানে প্রথম দেখাতেই প্রেম। কিংবা একই সাথে লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করে সেই থেকেই প্রেম। কিংবা আননোন মোবাইল থেকে ম্যাসেজ/ভয়েস শুনে প্রেম। এভাবেই সাধারণত আজকের যুগে ভালোবাসা শুরু হয়। সেখানে দুইজন মানুষের আদর্শিক মিল খুব কমই হয়। তাই প্রেমিক-প্রেমিকার মন কষা-কষি লেগেই থাকে। পরে অবশ্য তারা বলে যে এই মন কষাকষি নাকি তাদের ভালোবাসার ফিলিংস আরো বাড়িয়ে দেয়। আসলেই কি? মনের অজান্তে যে ভালোবাসা হয় সে ভালোবাসা সত্যিকারের ভালোবাসা শরীর ও সম্পদ দেখে ভালোবাসা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
স্বভাবগতভাবেই মানুষ ভালোবাসার পাগল,কেউ ভালোবাসে নিজেকে,কেউবা অপরজনকে,কখনো প্রেম করে প্রকৃতির সাথে, কখনো বা প্রিয়জনের সাথে। এই দুনিয়ার প্রতি টান কমাতে পারলে তখন সে প্রেম করে তার সৃষ্টিকর্তা-বিধাতার সাথে। শুভ উদ্দেশ্যে সৎ ভালোবাসা মানুষকে সাহায্য করে নিজেকে আরো পরিনত সুন্দর করে গড়ে তুলতে। সুতরাং মানুষের জীবনের জন্য প্রেম আসলেই প্রয়োজন। প্রেম হলো মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশের মূল উৎস। প্রেম ও ভালোবাসার মাধ্যমেই প্রতিটি সৃষ্টি বিকাশ লাভ করে। একারনেই প্রেম মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ন। ভালোবাসা বা প্রেম ছাড়া পৃথিবী এত সৃষ্টিশীল হতো না। তার সবচেয়ে বড় উদাহরন সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিটি সৃষ্টিকে অগাধ ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, এই কারনেই তার সৃষ্টি এত সুন্দর। ভালোবাসার ধর্ম একটাই। দুজন মানুষকে অদৃশ্য বন্ধনে জড়িয়ে রাখা। এ বন্ধন ছিন্ন হওয়ার নয়। প্রকৃত ভালোবাসার বাইরে কিছু থাকলে সেটি ছলনা, প্রতারণা কিংবা অবিশ্বাস। ভালোবাসার স্বরূপ একটিই, যেটি আমাদের মনকে পবিত্র করে দেয়। ভালোবাসার মধ্যে যতটুকু অবিশ্বাস কিংবা পঙ্কিলতা প্রবেশ করবে, ততটুকুই সেটি ভালোবাসা থেকে দূরে সরে যাবে বা যায়। তখন সেটিকে আর ভালোবাসা বলে অভিহিত করার যৌক্তিকতা থাকে না। যেটি সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসা, সেটি স্বর্গ থেকেই আসে, আবার স্বর্গেই চলে যায়। বর্তমান পেক্ষাপটে সর্গিয় প্রেম অবহেলায়,অনাদরে নির্মম পরিহাসে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নির্জম দ্বীপে রয়, আরসেই সর্গিয় প্রেম হারিয়ে গেলে বলি-

কত বেশী ভালোবাসি আমি তোমাকে,
যেদিন পূথিবী ছেরে চলে যাব
বুঝবে সেদিন তুমি আমাকে,
তোমার আখির অগোচরে-আমি চলে যাব যেদিন,
সেদিন তুমি আমাকে শুধু ভালোবাসবে।
বিধাতা নিজের হস্তে আমার জন্য
সুন্দর করে বানিয়েছে তোমাকে,
সর্গথেকে পাঠিয়েছে পূথিবীতে
মনে হয় বুকের ভিতরে ছিলে লক্ষ জনমে,
বুঝবে যেদিন তুমি
পাগলের মতো ভালোবাসবে শুধু আমাকে।
দিল্লির সম্রাট শাহাজান,প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের জন্য
ভালোবাসার চিহ্নের জন্য গড়েছিলে তাজমহল,
সে কতনা পারে ভালোবাসার মমতাজ হতে।
মনের গহিনে লেখা যায় যার নাম
কারো সাদ্ধ হয়না মুছে দেয়া তার নাম,
পূথিবীতে ভালোবেসেছে যে জন-অশ্রæশিক্ত জ্বলে ভাসছে সেজন,
বুঝবে যেদিন তুমি আমাকে-সেদিন পাগলের মতো
ভালোবাসবে শুধু আমাকে।

একটা সময় ছিল যখন প্রেমিক-প্রেমিকার দেয়া আঘাত সহ্য করেও প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের ভালোবেসে যেত। কিন্তু এখন এমনটি খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। এখন প্রেমিক-প্রেমিকা আঘাত সহ্য করার পরিবর্তে প্রতিশোধ নিতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এতেই ক্ষয়ে যেতে থাকে ভালোবাসার মহানুভবতা, ভালোবাসার উদারতা। আজকাল ভালোবাসার মধ্যে কোন বিশ্বাস নাই। তাই তো একে অপরের প্রতি সন্দিহান সর্বদা। কোথায় গেল, কি করল, কার সাথে মোবাইলে কথা বলল, কার সাথে কলেজে মেলামেশা করলো ইত্যাদি হাজারো রকম সন্দেহ। যদি বিশ্বাস অর্জন করা না যায় তাহলে একে অপরের প্রতি কখনো শ্রদ্ধা আসেনা। তাই আজকাল ভালোবাসা খুব সংকীর্ণ হয়ে গেছে। ভালোবাসা মানেই কেবল ঘোরাঘুরি, রাত জেগে কথা, চ্যাটিং, সন্দেহ আর মন কষা-কষি। আজকাল ছেলে-মেয়েদের অবসর সময় কাটে লাভারের সাথে গল্প করে, আড্ডা দিয়ে। ভালোবাসার মানে যে কেবল এগুলো নয় এটা তাদের চিন্তায় ঢুকেনা। ভালোবাসার মানুষের সাথে গল্প করার বিষয় কেবল কখন কি করল,কি দিয়ে খাইল, কে কাকে কতটুকু ভালোবাসে ইত্যাদি। দশ মাস দশ দিন সুগভীর নিরাপত্তার মধ্যে থেকে শিশুটি যখন নিরাপত্তাহীন পৃথিবীতে পদার্পন করে তখন তার একমাত্র নিরাপত্তা তার মা। সেই নিরাপত্তার স্থানও আজ নিরাপত্তাবিহীন।
তাই ভালোবাসাকে আমি কয়েকটা ভাগ করলাম—-
প্রথমতঃ, এই প্রেম খুব শক্ত হয়। এই প্রেম কারো মনে আসলে সে ওই ব্যক্তিকে ছাড়া আর কাউকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু এই প্রেমের একটি সমস্যা হল এর প্রকাশ খুব কম,কারণ এটাকে সত্যিকারের প্রেম বলে। আর কবি গুরু বলেছেন “যার ভালবাসা যত গভীর, প্রকাশ করার ক্ষমতা তার তত কম”। এই প্রেম যার মনে একবার বাসা বেঁধেছে সে অই ব্যক্তিকে না পেলে চিরকুমার থাকার মতও ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। কারণ সে মনের মধ্যে তাকে এমন শক্ত করে আকড়ে ধরে সেখানে অন্য কোন স্থান দেয়া দুষ্কর হয়। শত কষ্টের মাঝেও দুজন-দুজনকে ছাড়ে না,তখন অভাব ঘরের দরজায় দাড়ায় না, চারিদিক গ্রাস করলেও ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায় না। এটাকে বলে সত্যিকারের প্রেম। এই প্রেমে রাগ অভিমান ইত্যাদি বেশি থাকলেও ভাঙ্গন খুব কম। একান্ত কারণ ছাড়া এই প্রেম ভাঙ্গবে না।
আবার, এই প্রেম বা ভালোবাসার কোন ভিত্তি নেই। এই ভালোবাসা তরলের মতই যেই পাত্রে স্থান পায় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে,মানে যেখানে সে তার প্রতি অন্যকারো দুর্বলতা বুঝতে পারে সেই মনে সে তাকে সপে দেয়। মানেভালোবাসি ভালোবাসি বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলে ফেললেও কখনো টেকসই হয় না। কারণ এই ভালোবাসা বিভিন্ন মানুষকে তার মন দান করে থাকে,তার চোখে সবাইকে ভাল লাগে। আলাদা করে কাউকে সে নিতে পারে না।
আবার, এই প্রকার ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করে না। বায়ু যেমন অদৃশ্য থেকে সব কিছুকে দোলা দিয়ে যায়, ঠিক তেমনি এই ভালোবাসা মনের মধ্যে থাকে নিজেকে নিজে দোলা দিয়ে যায়। প্রকাশ না করার কারণে কখনো কখনো মনের মানুষটাকে কোনদিন বলাই হয় না। আর না বলার কারণে ঘর বাঁধার স্বপ্নও আসে না। এই ভালবাসায় তার ভালবাসার মানুষটিকে অন্যের সাথে দেখলে রাগ করবে অভিমান করবে কাঁদবে কিন্তু কখনো প্রকাশ করবে না। সে চায় তার ভঙ্গিমাতে অপরপক্ষ্য বুঝে নিক যে তাকে সে ভালোবাসে।

কারো কারো মতে‘এটি একটি আবেগ যার কারণে আমাদের কাউকে ভালোলাগে।’আবার কারো মতে, ‘কাউকে মন থেকে স্নেহ, মায়া, মমতা দেয়াই ভালোবাসা।’ অনেকের মতে, ‘ভালোবাসা হচ্ছে সিগারেটের মত, যার পরিণাম হচ্ছে পোড়াছাই।’ অনেকে কাউকে দেখে পছন্দ হলে বলে ফেলেন, ‘আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।’গত কয়েকদিন আগে এক বন্ধু আমাকে বলল বন্ধু ওই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি। ওকে আমি প্রোপজ করবো,কিভাবে বলব আমাকে বল। কিন্তু আমার জানা মতে সেই ছেলেটি একসাথে কয়েকটি মেয়ের সাথে প্রেম করে। আসলে এটা ঠিক নয়। এটা ভালোবাসা নয়। এটা হচ্ছে ভালোলাগা। আবেগ,যেটি আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়,স্বপ্ন দেখতে শেখায়,ত্যাগ-তিতীক্ষা-ধৈর্য্য শেখায়। ভালোবাসা শুধুমাত্র প্রণয় থেকে হয় না। ভালোবাসা স্নেহ, মায়া, মমতা থেকেও আসে। একটি শিশুর জন্ম হলে মা তাকে লালন পালন করে। শিশুটি সময়ে অসময়ে জ্বালাতন করে – কাঁদে, ঠিকমত ঘুমায় না, খায় না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এতকিছুর পরও যে কারণে মা তার সন্তানটিকে ফেলে রেখে যেতে পারে না তা হল – ভালোবাসা। সত্যিকারের ভালোবাসা আসে ভক্তি,শ্রদ্ধা,সম্মান থেকে।যেমন: আমরা আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদীকে শ্রদ্ধাভরে ভালবাসি।প্রণয় অর্থেই হোক, আর মায়া-মমতা-সম্মান অর্থেই হোক, ভালবাসা মানে হলো কারো ভাল চাওয়া। প্রণয়ের দিক থেকে ভালোবাসাকে চিন্তা করলে দেখা যায় – যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে তখন তারা একে অপরের ব্যাপারে পছন্দ করে।একজন আরেকজনের ব্যাপারে ছোটখাট বিষয় নিয়েও মাথা ঘামায়। একজন আরেকজনের ক্ষতি দেখতে পারে না বরং সবসময় তার ভাল চিন্তা করে। একজন আরেকজনকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।একে অপরকে সবসময় দেখতে ইচ্ছে করে, একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মনের ভিতর আগলে রাখতে ইচ্ছে করে।একজন আরেকজনকে দেখলে বুকের ভেতরে একটা শান্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একজন আরেকজনের দিকে তাকালে মনে হয় যেন, ‘দুচোখ ভরে দেখি।’ ভালোবাসা মানে শুধু আপন করে পাওয়া নয়, একে অপরের প্রতি অধিকার সৃষ্টি ভালোবাসার অন্যতম আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ত্যাগ স্বীকার করা।ভালোবাসার মানুষটির জন্য অনেক সুবিধা ছেড়ে দেয়া বরং অনেকটা আনন্দের বিষয় হয়ে থাকে। ভালোবাসা দেখানোর প্রয়োজন হয় না, ভালোবাসা এমনিতেই প্রকাশ পায়। ভালোবাসার জন্য তাড়াহুড়া করা উচিৎ নয়। চাইলেই কাউকে ভালোবাসা যায় না।জোড় করে কাউকে ভালোবাসা যায় না।এজন্য মনের ভেতর থেকে অনুভূতি তৈরি হওয়া প্রয়োজন। ভালোবাসা হল এক লিঙ্গ তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মনের মধ্যে যে টান অনুভব করে এবং তার অনুপস্থিতিতে সে তার অস্তিত্ব টের পায় এবং যে এক অদৃশ্য শরীর তার মনকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে,এই যে অনুভতি তাকেই বলে প্রেম ও ভালোবাসা।

যে ভালোবাসে, সে প্রথমেই সম্মান করে। প্রেয়সীকে দেবীর আসনে বসিয়ে পুজো করে। অন্যকোনও মহিলার দিকে তার নজর যায় না। প্রেয়সী যেমনই হোক, তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। আগামীদিনের স্বপ্ন দেখে। বিয়ে করে সংসার করার স্বপ্ন দেখে। ফলত, শুরু থেকেই প্রেয়সী একপ্রকার স্ত্রীর মর্যাদা পায়। প্রেম করব, লোককে দেখাব, বাহবা কুড়াবো – এই মানসিকতা থাকে না। মানুষমাত্রেই ভুল হয়। কিন্তু সেই ভুল যে ক্ষমা করে দেয় তার মন বড়। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেও ভুল হয়। অশান্তি হয়। যে ভালোবাসে, সে সব দোষ মেনে নিতে পারে। ক্ষমাও করে দিতে পারে অনায়াসে। স্বাধীনতা -যে ভালোবাসে সে ভালো কোনও কাজে বাধা দেয় না। প্রকৃত প্রেমের গোড়ায় থাকে বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আগাগোড়া প্রেমকে সমৃদ্ধ করে। সেই বন্ধুত্বের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে ভালো পরামর্শদাতা। অনেকের ধারণা প্রেম না থাকলে সমঝোতা করে মানুষ। কিন্তু প্রেমের সম্পর্কেও সমঝোতা ব্যাপারটা চলে আসে। সমঝোতা হতে হবে দু’তরফের। সেটা কখনওই একতরফা হতে পারে না। একজন দু’পা এগোলে অন্যজন দু’পা পিছাবে। এরকমভাবেই চলবে সম্পর্ক।

ব্রেকআপের বড় একটি কারণ হলো প্রতারণা। একজন বিশ্বস্ত, অপরজন প্রেম করে বেড়াচ্ছে তার অজান্তে এই ঘটনাগুলো অকল্পনীয় ফাটল ধরায় সম্পর্কে। প্রতারণা হলো সেটাই, যেটা আপনাদের সম্পর্কের সীমা লঙ্ঘন করে এবং বিশ্বস্ততা ভাঙ্গে। দুঃখের ব্যাপার হলো, আপনি যতটা তাকে নিয়ে ভাবছেন, তার চাইতেও অনেক বেশি দেখা যায়। সবার আগে তারা নিজের স্বার্থ দেখেন এবং নিজেদেরকে ভালোবাসেন অন্য সবার চাইতে বেশি। তারা প্রমাণ করতে চায় তারা ভালোবাসার জন্য কতটা যোগ্য। একজন মানুষের ভালোবাসা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। তারা চায় সবার থেকে ভালোবাসা পেতে।এমনকি তা করতে গিয়ে প্রতারণা করাটাও তাদের পক্ষে অসম্ভব নয়। বিশেষ করে আরো ভালো কোনো সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা সবসময় তাদের মাথায় থাকে। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ: আমাদের সবারই এমন কিছু সময় আসে যখন আমরা নিজেদের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। সেটা না। এ ব্যাপারটা খুবই ভয়ংকর। কোনো কারণে দুজনের মাঝে দুরত্ব তৈরি হলেই প্রতারণা করার প্রবণতা বাড়তে দেখা যায় এসব মানুষের ক্ষেত্রে। মনের গভীরে প্রেম বিশ্বাস হারিয়ে,মনের মানুষের ছলনায় জ্বরজড়িত হয়ে,বেদনাক্লান্ত হৃদয়ে র্দীঘশ্বাস ছেড়ে বলি-
আমায় এত কস্ট দিলি বন্ধুরে
আমি তোর প্রেমে পাগল
মন জানে আর কেউ জানে না ।
ও সাথিরে তোমায় আমি পাবো বলে
কত স্বপ্ন দেখেছি দিবানিসি ধরে
তুমি আমারে দিলি এমন যন্ত্রনা,
তিরের আঘাতের মতো-কলিজা আমার হয়েছে ফুটা,
সেই যন্ত্রনায় করেছি আমি ছটফট।
বন্ধুরে নয়নের জ্বলে নিরবে কাঁদাইলি
ভাসাইলি দুখের সাগরে
কত কস্টে আছি-আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।
কত চেয়েছি তোরে আমি
তবুও আমি তোরে পাইলাম না
যে যারে ভালোবাসে আচরনে যায়রে জানা-তবু বন্ধু তুমি বুঝলে না।
আমার অন্তর তোমায় ভালোবাসে
তোমায় ছাড়া আজ এ অন্তর কিছু বুঝে না
তোমার জন্য ব্যাকুল এ মন
তোমার জন্য মনের বাগান আজ করেছে হা-হা-কার।

এতদিন ভালোবেসে আসা খুব আপন এবং প্রিয় মানুষটিকে ভুলে যাওয়া কখনো সম্ভব নয়,যত দূরে যাওয় যায় তত মনে হয় কাছে চলে আসে,যে চলে গেছে তার জন্য জীবন ধংস করার কী কারন,তাই জেনে নিন ভালোবাসার মানুষটিকে দ্রুত ভুলে যাওয়ার বৈজ্ঞানিক কিছু উপায়। আদর্শ খুঁজে বের করুন প্রতারণা কিংবা ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে দূরে চলে আসবার কষ্টটা আপনার একার বলে মনে হলেও বাস্তবে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই জীবনের কোন না কোন সময়ে এই কষ্টের পথটা ধরে হেঁটেছেন, হাঁটছেন এবং হাঁটবেনও।
ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিচ্ছেদ যে নো জীবনটাকে থমকে দেয়। আমাদের ভালোবাসার মানুষটি কিছুক্ষণের জন্য দূরে গেলে আমাদের পৃথিবীতে নেমে আসে অন্ধকার,সেখানে যদি ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে যান তাহলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ভেঙ্গে পড়ে সারাজীবন তো আর থাকা যায় না। আমরা থমকে গেলেও জীবন তো আর থেমে থাকবে না। তাই আমাদের নিজেদেরকেই সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনে।নতুন ভাবে উঠে দাঁড়াতে হবে, ভুলে যেতে হবে পুরোনো ফেলে আসা স্মৃতি। যা হয়ে গিয়েছে তা মন থেকে মেনে নিন অনেকেই সম্পর্কচ্ছেদ মন থেকে মেনে নিতে পারেন না।যার ফলে মানসিকভাবে আরও বেশি ভেঙে পরেন।কিন্তু যা হয়ে গিয়েছে তা মেনে নেয়াই ভালো।কারণ এতে করে নতুন কিছুর প্রতি নজর দেয়ার আশা জন্মে মনে। যিনি চলে গিয়েছেন তাকে চলে যেতে দিন যিনি চলে গিয়েছেন তাকে সত্যিকার অর্থেই যেতে দিন। নিজের মনে তার স্মৃতি রেখে এবং জীবনে তার রেখে যাওয়া স্মৃতি মনে করে কষ্ট পাওয়া কোনো অর্থ নেই।তাকে যেতে দিলে আপনি নিজেকে সামলে নিতে পারবেন।নিজেকে ব্যস্ত রাখুন নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করুন নানা কাজে।অবসর বসে থাকলে বা একা থাকলে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে,তাই একা থাকবেন না এবং নিজেকে খালি বসিয়ে রাখবেন না। পেছনে ফিরে দেখবেন না জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্যই শুধুমাত্র পিছনে ফিরে দেখা উচিত।কষ্ট পেতে বারবার পেছনে ফিরে দেখার কোনো অর্থ নেই।এতে করে আপনি আরও ভেঙ্গে পরতে পারেন।তাই অতীত ধরে না রেখে ভবিষ্যতটা ভাবুন।পুরোনো স্মৃতি ভোলার জন্য নতুন স্মৃতি গড়ে নিন নতুন কোনো স্মৃতি না গড়ে নিলে পুরোনো স্মৃতিই বারবার মনে পড়বে।তাই নতুন করে ভালো কিছু স্মৃতি গড়ে নিন যা আপনার পুরোনো স্মৃতিকে ভুলিয়ে দেবে।পুরোনো মানুষটিকে যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন আপনার পুরোনো প্রেমিক প্রেমিকার সাথে সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন করে দিন,এবং তার কাছ দুরে চলে যান।একজন মানুষ পুরোপুরি চোখের আড়াল হয়ে গেলে মন থেকে মুছে যেতে খুব বেশি দেরি লাগে না এবং কষ্টও কম হয়। তাই কোনো ধরণের যোগাযোগের পথ খোলা রাখবেন না।নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত করুন। যিনি চলে গিয়েছেন আপনাকে ফেলে তার জন্য কষ্ট কেন পাবেন তা একবার ভেবে দেখুন।আপনাকেও ভুলতে হবে এই প্রতিজ্ঞা করে নিজের মনকে দৃঢ় করুন। নতুন করে ভালোবাসতে শিখুন ভালোবাসা একবারই হয় এটি ভুল কথা। সত্যিকারের ভালোবাসা সবকিছু ভুলিয়ে দিতে পারে। নতুন করে ভালোবাসতে শিখুন। এবার আপনি হয়তো নিজের সত্যিকারের ভালোবাসায় ভুলে যেতে পারবেন ফেলে আসা ভুলটি।

সন্দেহ ভালোবাসাকে নিঃশেষ করে দেয়। ভালোবাসার সম্পর্ককে সব সময় সুন্দর রাখার অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিশ্বাস। প্রতারণা করা কখনো উচিত না। মানুষের মন একটা অদ্ভুত রকমের। প্রেম কখনো বলে-কয়ে আসে না। প্রেম মানে না সমাজ সংসার, লোকলজ্জা, চক্ষুলজ্জা। নারী-পুরুষ সম্পর্ককে কোনো ছাঁচে ফেলা যায় না। এত বেশি পরিবর্তন হয়, মানুষের মনের তা নিয়ন্ত্রণ করাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। মানুষের আবেগ, ভালোবাসা, কষ্ট, যন্ত্রণার অনুভূতিগুলো দেখানো যায় না, অনুভব করা যায়। তাই, ভালোবাসার মানুষটির যত্ন নিতে হয়। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা-মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দিতে হয়। যেকোনো মূল্যে বিশ্বাস বা আস্থার জায়গাটা ঠিক রাখতে হবে। নৈতিকতাবোধ ভালোবাসায় থাকাটা খুব জরুরি। সম্পর্কের প্রতি সৎ থাকতে হবে।
কদিন আগে হঠাৎ খেয়াল হলো, ফেসবুকে লিখলাম—ভালোবাসার আসলে সংজ্ঞা কী? প্রত্যেকে নিজের মতো করে উত্তর দিল। যেমন নানীগোপাল দাস লিখেছেন,
‘ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি, যা থাকলে মনে হয় বড় বালাই। একে কোথায় রাখি আর যার অভাবে মনে হয় বেঁচে থাকা অর্থহীন। যার গভীরতা মাপতে গেলে খেই হারাতে হয়। যার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা মাপতে গিয়ে দিশেহারা গণিতজ্ঞ।
সুনন্দা বলল, ‘ভালোবাসার অনুভূতিগুলো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে। তার কাছে ভালোবাসা হচ্ছে এখন “দায়িত্বপালন”! ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখার দায়িত্ব—এই দায়িত্ববোধ অনেক কিছুর…।
তাই বলি —
‘ভালোবাসার বাগানে সম্পর্কগুলো হলো এক একটি জীবন্ত গাছ আর সেই বাগানের মালী হিসেবে নিজেকে বসিয়ে দিয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করলেই ভালোবাসা সুগন্ধ ছড়াতে থাকবে তোমার চারপাশে।’
তাই ভালোবাসার যত্ন নিতে হয়। গাছে জল না দিলে যেমন গাছটি মরে যায়, ভালোবাসার যত্ন না নিলে ভালোবাসাও মরে যায়।

দীপাঞ্জন প্রধান
ঝাওয়া
Mob — 7602159678
লেখা — 27/08/2019
প্রকাশ — 21/09/2019
website — http://www.dipurstory.wordpress.com

প্রেম এসেছিল নীরবে

সুব্রত দাস, এই দাস পদবী তার জন্মসূত্রে পাওয়া কিনা তা অজানা। কোনো এক শ্রাবনের ঝড়ে এক পাগলী গ্রামের এক নির্জন প্রান্তে শিশুটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিল। কয়েকদিন শিশুটিকে সযত্নে রেখে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াত। এমন এক সকালে এক নিঃসন্তান ভদ্রমহিলা প্রাতঃভ্রমণ করার সময় এক অপরিচিত নোংরা বস্ত্র পরিহিতা মহিলার কোলে শিশুটিকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলেন। শিশুটিকে জড়িয়ে রেখেছে মহিলাটি। শিশুটির বয়স তেমন বোঝা না গেলেও পা দুটো দেখে মনে হয় ২-৩ মাসের বেশি হবে না। শিশুটির মা যে এই মহিলা নয় তা সহজে বোঝা যায়। মহিলাটির বয়স কম করে হলেও ষাটের বেশি হবে।

এই আগন্তুক মহিলা নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শিশুটিকে উদ্ধার করে এক অনাথ আশ্রামে রেখে দেন। প্রায় খোঁজ খবর রাখতেন শিশুটির, দিন যায়, শিশুটি পাঁচে পা দিয়েছে। সেই ভদ্রমহিলা নিঃসন্তান হয়েও মাতৃসুলভ মন দিয়ে শিশুটির থাকার স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সারা জীবনের বিদায় নিলেন এই ধরা থেকে।

তারপর অনেক কথা, তার জীবনে অনেক বাধা পার হতে হয়েছে সুব্রতকে। স্কুল জীবনে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু ওকে থামিয়ে রাখা যায়নি কেবল তার মেধা ও কর্মকুশলতার দিক। সহপাঠী ছাড়াও আশ্রমের প্রায় সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটা তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তারপর কলেজের গন্ডি অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করল। সেখানে ও মাথা উঁচু করে পথচলা। তবুও কোথাও যেন পরাজিত সৈনিকের মতো মনে হতো। কারণ কৈশোরে তার পরিচয়টা সে বুঝতে পারেনি, বয়ঃসন্ধি কালে এসে তাকে আঘাত করে। যখন সে একা থাকত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মানপত্র গুলি চোখ বুলিয়ে দেখে নিত। জীবনে চলার পথে কোনো না কোনো সময় বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, তাই হয়েছিল সুব্রতর জীবনে।

সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। প্রতি বছরের মতো এবছরও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান সূচীতে ছিল কবিতা, নৃত্য, সঙ্গীত আর ছিল এক বিশেষ আলোচনা সভা। আলোচনার বিষয় ছিল বর্তমান যুব সমাজের কাছে জীবনানন্দ কতটা জনপ্রিয় ? আর সমস্ত অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সুব্রত। রাত্রি তখন দশটা। বিচারক মণ্ডলী মূল মঞ্চের বিপরীত দিকে বসে রয়েছে। দর্শক সংখ্যা গত বছরের থেকে বেড়েছে। মাঝে মাঝে দর্শক হাততালি দিচ্ছে। ছোটরা বেলুন নিয়ে খেলা করছে। কোথাও আবার বাজী ফোটানোর আওয়াজ। প্যান্ডেলের মধ্যে কোথাও ফেরিওয়ালা খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ রাত্তির সম্মুখীন সুব্রত।

হঠাৎ আলো নিভে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে কিসের চিৎকার, হুড়োহুড়ি পড়ে গেল চারিদিকে। ঠিক সেই সময় কারা যেন এসে জাপটে ধরল সুব্রতকে। টেনে নিয়ে গেল মঞ্চের বাইরে, গায়ে মারও পড়ল সুব্রতর। তারপর কি হল আর কিছুই জানেনা সুব্রত।

অচেতন অবস্থায় কেটেছে কয়েকদিন। যখন তার চেতনা ফিরল চোখ খুলে দেখল কোনো এক নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে আছে। পাশে বসে আছে চেনা মুখ অতিথি। অনুষ্ঠান সূচীতে তার নাম ছিল। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’কবিতা আবৃত্তি করবে। বাবা মাকে নিয়ে এসেছিল সেদিন। বাকি বিষয়টা সুব্রতর অজানা।

অতিথির সঙ্গে ব্যাক্তিগত ভাবে আলাপ হয়নি কোনোদিন। সুব্রত কিন্তু সেদিন দেখল খুব আপনজনের মতো পাশে বসতে। ছোট শিশুর মতো চোখে ভরে গিয়েছিল সেদিন। কথা ছিলনা দুজনের মুখে। অতিথি হাতের রুমাল দিয়ে চোখ মুছাতে গিয়ে নিজের চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। অতিথিকে কাছে পেয়ে সুব্রতও স্বপ্ন দেখছিল। নানা প্রশ্ন জেগেছিল তার মনের মণিকোঠায়। কে এই মেয়েটি, কেনই বা তার পাশে বসে আছে? চার দেয়ালের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার এক অনন্য সুন্দর রোমান্টিকতা অনুভব করছিল সুব্রত। অতিথি পরিস্কার ভাবে বলল –
– ‘কি, এত ভাবছেন’।

উঠে বসবার চেষ্টা করল সুব্রত। কিন্তু তার আগে চোখ পড়ল অতিথির দিকে। পরনে হালকা রঙের গোলাপি শাড়ি, পাশে থাকা রজনীগন্ধার তোড়া, এলোমেলো কেশ ভাগে বকুল ফুলের মালা দিয়ে জড়ানো, কপালে আলতো করে বসানো ছোট গোলাপি টিপ, খোলা জানালা দিয়ে পড়ন্ত বিকেলের শেষ আলোর রেখা পড়েছে শাড়ির ভাঁজে। বড়ই সুন্দর লাগছিল অতিথিকে। অতিথি এমন ভাবে কাছে আসবে তা সুব্রত বুঝে উঠতে পারেনি। আর পারেনি বলেই রোমান্টিকতা ছুঁয়ে যাচ্ছিল একে অপরকে।

অতিথি বলল –
-‘সারাক্ষণ কার কথা ভাবছেন ? আমি তো রয়েছি আপনার পাশে।
সুব্রতর চোখে জল।ছড়িয়ে পড়া আঁচলের এক কোন দিয়ে সুব্রতর চোখ মুছিয়ে দিয়ে অতিথি বলল –
-‘ এমন করে ভেঙে পড়লে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যাবে। যাক সে কথা ডাক্তারবাবু বলেছেন আজ আপনার ছুটি করে দেবে। তাই আমি আগেই চলে এসেছি। বাবা মা একটু পরে গাড়ি নিয়ে আসছে’।

এদিকে সন্ধের বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠল। সেই আলোতে অতিথিকে এক পলকে দেখে নিল সুব্রত। এমন এক সময়ে যৌবনা যুবতীর সন্নিধ্যলাভ সুব্রতর কাছে পরম আনন্দের বিষয় ছিল। এমন সময় নার্সিংহোমের সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। অতিথির মধ্যে বেশ খুশির ভাব। জানালা খুলে দেখে নিল বাবা ও ভাই গাড়ি থেকে নামছে। কিন্তু তখন অতিথির চোখে মুখে এক বিষণ্নতার ছাপ। সে বলল –
-‘এই যে আপনার ছুটি, এবার কোথায় যাবেন বলুন,আপনাকে পৌঁছে দেওয়া হবে সাবধানে থাকবেন কিন্তু’।
সুব্রত ভাবল কোথায় যাব, আশ্রম থেকে এসেছি কতদিন হয়ে গেল। সুব্রত আর কিছু বলতে পারছিল না। এমন সময় অতিথির বাবা এসে ঢুকল। কিছু বলার আগেই সুব্রতকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। সুব্রতকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। গাড়ি চলতে আরম্ভ করল। পৌঁছল অতিথির বাড়ি। সুব্রত হয়ে উঠল পরিবারের একজন। অতিথির সংস্পর্শে বেশ ভালোই কাটছিল সুব্রতর দিনগুলি।

সেদিন ছিল ফাগুনী পূর্ণিমা। চাঁদ উঠেছে আকাশে , অন্য দিনের মতো এ-রাত্রিটা বেশ মোহময় লাগছিল। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় কদম আর বড় অশ্বথের গাছ। ফুলে ভরে গেছে কদম গাছ। আর অশ্বথের ঝুড়ি গুলো মাটিতে নেমে এসেছে। ঘুম নেই সুব্রতর। কাছে পেতে চায় অতিথিকে। এ এক নীরব ভালোবাসা টানছে।

রাত্রি কতটা হবে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। চোখে ঘুমও আসছে না। এমন সময় খুব হালকা কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। হালকা হলেও বোঝা যাচ্ছে কার গলা। অতিথির মা ও বাবা কথা বলছে অতিথির জন্ম পরিচয় নিয়ে। অতিথি মন দিয়ে শুনছিল, শুনছিল সুব্রতও। চাঁদ যে কখন গড়িয়ে পড়ছে পশ্চিম আকাশে তা বুঝতেই পারেনি সুব্রত। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আর কেউ জেগে নেই। জেগে আছে শুধু সুব্রত। কেবল ছোট একটি কাগজে লিখল –
-‘আমাকে খুঁজো না অতিথি……’।

লুকোনো স্মৃতি

5ই ফেব্রুয়ারি 2019 রাত্রি তখন ঠিক 9টা ছুঁই ছুঁই । হঠাৎই মোবাইল ফোনের আওয়াজ। বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অন্যমনস্কতাকে সরিয়ে ফোনের দিকে মনোনিবেষ করল। তৎক্ষণাৎ দৌড়ে এসে ফোনটি হাতে তুলে নিল। দেখল অচেনা এক নম্বর। ফোন ধরবে কি ধরবে না এই নিয়ে নিজের মনের ভিতর মতবিরোধ দেখা দিচ্ছিল। কেননা কয়েক দিন আগে এক অচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। ফোন ধরা মাত্রই নিজের ফোনের সমস্ত নথি চুরি হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে সাইবার ক্রাইম যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই কথা ভাবতে ভাবতে ফোন কেটে গেল। আবার কিছুক্ষণ পর আবার সেই নম্বর থেকে ফোন বাজল। এই নম্বর হয়ত পরিবারের কারুর চেনা , এইসব কথা ভাবার পরও তার ফোন ধরার প্রতি অনিহা দেখা গেল। সে নিরুপায় হয়ে ফোন ধরল। ফোনটি ধরার সঙ্গে সঙ্গে এক মহিলার কন্ঠস্বর ভেসে এলো –

-‘ভালো আছিস নিলু’।

কন্ঠস্বর চেনা চেনা মনে হলেও সেই মুহূর্তে বুঝতে পারেনি। কার গলা , কে আবার আমাকে এরকম আমাকে সম্বোধন করে। কিছুক্ষণ স্তম্বিত হয়ে থাকার পর কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠল –

-‘কে তুই ; আমি তো বুঝতে পারছি না , দয়া করে বলবি আমায় কে তুই ‘।

এই কথা বলার পর অধির আগ্রহে কান পেতে শুনতে লাগল উত্তর পাওয়ার জন্য।

ফোনের ওপারে মহিলা কন্ঠস্বরটি নিলুর এইরকম প্রত্যুক্তি শুনে নিজেকে সরিয়ে নিল। সে আশা করেনি নিলুর কাছ থেকে এরকম কথা গুলো শুনতে পাবে বলে। মহিলাটি ভেবেছিল অনেকদিন পর কথা হচ্ছে ,নিলু নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে কথা বলবে। কেননা বহু দিনের বন্ধুত্ব।মাঝখানের কয়েক দিনের আমার আচরনে এখনও রেগে রয়েছে নিলু।এই কথা ভেবে ফোন কেটে দিল। নিলু কিন্তু বুঝতে পারেনি যে ফোন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তৎক্ষণাৎ নিলু ও ফোন ব্যাক করলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না।তার কারণ মহিলাটির ফোন বন্ধ। তখন থেকে নিলু আরও অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। কেন জানিনা নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না । সে অধীর আগ্রহে ব্যকুল চিত্তে মুখিয়ে ছিল কখন সে ওই মহিলাটির গলা শুনতে পাবে , ও তার নাম জানবে।

এই কথা ভাবতে ভাবতে রাত কেটে গেল , পরের দিন সকালে নিলু আর একবার চেষ্টা করল যাতে ফোন ধরানো যায়। কিন্তু সেই একই কথা। ফোন রেখে দিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু জানতো সে একদিন না একদিন আবার ফোন করবে। কারণ নিলু বুঝেছিল কোনোদিন তার সঙ্গে আমার নিশ্চয়ই পরিচয় ছিল । নিলু জানতো একবার যখন কথা হয়েছে আবার কথা হবে কোনো না কোনোদিন। নিলু সেই প্রতীক্ষায় রইল । প্রতীক্ষা মতো সেইদিন আবার সন্ধ্যায় আবার ফোন এলো। নিলু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল পরিচয় আগে নেবে।

-‘কে তুমি ? পরিচয় না দিলে আমি কথা বলবো না’।

অপর দিকে মহিলাটি পরিচয় না দিয়ে থাকতে পারলো না। সে নিজের পরিচয় ব্যক্ত করলো নিলুর কাছে।

–‘পরিচয় তো আমি দেব ;তার আগে কয়েকটা কথা বলছি সেটা শুনে তুই যদি বুঝতে পারিস আমি কে।’

মহিলাটি পরিচয় দেওয়ার ঢঙে নিজের বর্ননা করতে লাগল।

–‘মনে আছে তোর আমরা দুজন সেই 2007 সাল থেকে এক সঙ্গে পড়তাম। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর দুজনের বিষয় প্রায় একই ছিল , শুধু দুটি বিষয় আলাদা । 2014 সালের প্রথমের দিকে আমি তোকে কিছু বলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম কিন্তু ভয়ে আমি বলতে পারিনি’।
এই কথা শুনে নিলু নিস্তব্ধ হয়ে ফোনটি কানে ধরে রেখে শুধু দাঁড়িয়ে থাকল কোনো কথা বলল না। কেন এরকম হল তার ; সে কি আগে থেকেই জানত , নাকি আরো কিছু। নিলু ফোনটি কেটে দিল । দুই হাত মুখে চেপে ধরে নিজের পাতা বিছানায় মুখ নিচু করে শুয়ে পড়ল। নিলু ভাবতে লাগল একি করে হতে পারে যাকে আমি একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম , সে আনার আমার কাছে , আমাকে ফোন করছে । নিলু নিজেকে অনেকটা নীচে নামিয়ে নিল।একি হতে পারে , কি ঘটেছিল সেদিন কেনই বা নিলু তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

সবে মাধ্যমিক শেষ করে নতুন ক্লাসে ভর্তির আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে কারণ যেই স্কুলে মাধ্যামিক পর্যন্ত পড়েছে সেই স্কুলে আবার পড়ার জন্য। আবার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হই হুল্লোড় আরও অনেক কিছুই। সেই সঙ্গে কৈশোর অতিক্রম করে বয়ঃসন্ধিতে পা , মনকে একজায়গায় রাখার চেষ্টা করলে ও কিছুতেই আর সংযত হয় না। নতুন ক্লাস , নিজেদের মনে কোন এক চাপ থাকলেও পুরোনো বন্ধুবান্ধব পেয়ে সবাই খুশি। ক্লাসে নতুন কিছু মুখও দেখা গেল , যারা অন্য স্কুল থেকে এসেছে। পুরোনো নতুন দের নিয়ে এভাবেই কাটছিল দিনগুলি। আবার মাঝে মধ্যে মনে হতো আর মাত্র দুই বছর , কয়েকটা দিন কেটে গেলে সবাই আলাদা , এই বিষয়টা নিয়ে নিজেরা প্রকাশ না করলেও একটা চাপানোত্তর সৃষ্টি হয়েছিল।

এই ভাবে 5-6 মাস কেটে যাওয়ার পর নিলুর সামনে আকস্মিক ভাবে শ্রুতি নামের এক মেয়ে। নিলু অবশ্য তাকে চিনতো। নিলু ভেবেছিল প্রতিদিনের মতো কোনো সাহায্যের জন্য এসেছে । কিন্তু সেদিনের তার চাউনি ছিল অন্যরকম । নিলু তো অনায়াসে বলে ফেলল –

–‘কী বল ?’

শ্রুতি বলে উঠল —

—‘আজ আমি কিছু সাহায্য চাইতে আসিনি। তোকে কিছু বলতে এসেছি’।
—‘তো বলনা কী অসুবিধা হয়েছে , আমি তো রয়েছি সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি’।
—‘আমি তোকে ভালোবাসি’।
এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিলুর সারা শরীর শীতল হয়ে এলো। যেন নিথর দন্ডায়মান বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকল। নিলু ভেবেছিল পাঁচ বছর একই ক্লাসে পড়াশুনা করেছি আমার তো কোনো মনে হয়নি , আর মনে হবার মতো কিছুই নেই , নিজেরা নিজেদের মতো একসঙ্গে মেলামেশা করেছে। নিলু এক মনে কি যেন ভাবছিল। তখন শ্রুতি বলে উঠল —
–‘কি এত ভাবছিস ; কিছু তো বল’।
নিলু যখনই কিছু বলতে যাবে শ্রুতি আবার বলতে আরম্ভ করল —
-‘তুই আজ আর আমায় ফেরাতে পারবি না । তোকে এই কথাটা বলবো বলে কতদিন অপেক্ষা করছি , কিন্তু নিজের মধ্যে সাহস পাইনি। যখন আমরা ক্লাস ফাইভ এ পড়তাম তখন একে অপরকে ভালোভাবে জানি না । যেদিন তোকে প্রথম দেখলাম সেদিন ছিল এক বৃষ্টির দিন। ছাত্র ছাত্রী বেশী না আসার জন্য একসঙ্গে ক্লাস হয়েছিল , আর তুই ক্লাসের মনিটর ছিলি। আর আমি তোকে স্যারের কাছে মার খাইয়েছিলাম। তুই প্রচুর কেঁদেছিলি। প্রথমে রাগের মাথায় আমি আনন্দ পেলেও পরে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আর তখন কী ভালবাসা , কী প্রেম কিছুই জানতাম না। শুধু তোকে দেখলে আমার ভালো লাগত।এরপর আর অনেক ঘটনা রয়েছে।তুই আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিসনা’।
এই সব কথা শোনার পর নিলু বলে উঠল —
–‘দেখ তোর ধারণাটাই ভুল , আমরা সহপাঠী ভালো বন্ধু ও বলতে পারিস , আর এই সব ভালোবাসা আমি মানিনা। আমার পক্ষে এইসব ভালোবাসা প্রেম করা সম্ভব নয় , আর আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি সামনে পরীক্ষা আছে তাতে মন দে। তোকে তো ভালো রেজাল্ট করতে হবে’
আরও বলল —

–‘জানি আমার উপর তোর রাগ হচ্ছে , রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। জানি আমাকে ভুলতে তোর কষ্ট হবে , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে ভুলে যা , যত তাড়াতাড়ি ভুলতে পারবি তত তাড়াতাড়ি তোর নিজের সাফল্যের দিকে এগোতে পারবি”। এই বলে নিলু ফিরে এলো। শ্রুতি যথাস্থানে দাঁড়িয়ে থাকল।
কয়েক দিন পর পরীক্ষা , পরীক্ষায় মন দিতে চাইলেও কিছুতেই মন বসতে চাইছিল না । কোনো রকমে পরীক্ষা শেষ হলো , যে যার নিজের রাস্তায় পাড়ি দিয়েছে , তবুও শ্রুতি আশায় বুক বেঁধেছিল। রেজাল্টের দিন আবার দেখা হবে। হয়তো বা নিলু সেদিনই তার প্রত্যাশা পূরণ করবে। সেদিন নিলু রেজাল্ট নিতে এলোনা। শ্রুতি রেজাল্ট হাতে দাঁড়িয়েছিল শুধু একবার নীলুকে জানাবে তার রেজাল্ট ভালো হয়েছে । কিন্তু আর বলা হলো না। সেদিনের পর থেকে নিলুর সঙ্গে আর কোনোদিন দেখা হয়নি।

আবার ফোন বাজল , শ্রুতি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বলেই ফেলল আমি শ্রুতি।

–‘তুই কেমন আছিস , অনেক দিন পর নাম্বার জোগাড় করে তোকে ফোন করলাম । এর পরেও তুই আমার সঙ্গে কথা বলবি না’।

পুরোনো বান্ধবীর সঙ্গে কথা হচ্ছে , নিলু বাইরে আনন্দিত হলেও অন্তর যেন ফেটে যাচ্ছে । যাকে একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিল সে আবার ফিরে এসেছে । আবার সেই পুরোনো বন্ধুর মতো কথা হয় । কিন্তু শ্রুতি যেন নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও সে যে আগের নীলুকে পেয়েছে। সময় পেলেই নীলুকে ফোন আর নীলু বসে থাকত কখন সেই পতিক্ষিত গলা শুনতে পাবে।নিলু তার আগের ভুল বুঝতে পেরে ঠিক করেছিল ভুল শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে । এবার সে মনস্থির করল সামনে সরস্বতী পূজার দিনই তাকে সেই কথাটা বলবে সে যে কথাটা শুনতে চেয়েছিল , তাকে নীলু ফিরিয়ে দিয়েছিল। দুজনের কথাবার্তায় ঠিক হলো তারা সরস্বতী পূজোর দিন একে অপরকে এক ভালো উপহার দেবে। নীলু ভাবল শ্রুতি হয়তো আমাকে আবার সেই কথাটা বলবে। আবার উল্টো টাও হতে পারে আমি যদি সেই কথা বলি এই যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয় । সে যাই হোক আমি বলবোই।

পঞ্চমীর সকালে তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে অঞ্জলীর জন্য রওনা হয় স্কুলের দিকে। সবুজ পাজামা সবুজ পাঞ্জাবিতে নীলুকে খুব সুন্দর লাগছিল। দুজনে একসঙ্গে অঞ্জলী দেবে বলে নীলু অপেক্ষা করতে লাগল। কখন শ্রুতি আসবে আর কখন অঞ্জলী দেবে। স্কুলে অনেক ভিড় ,আর এই ভিড়ে খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। যতটা সম্ভব খোঁজা যায় ততটাই চেষ্টা করতে লাগল ,কিন্তু পাওয়া গেল না। নিরাশাগ্রস্ত হয়ে একজায়গায় চুপটি করে বসে ভাবতে লাগল। কেমন দেখতে হবে শ্রুতিকে , ওকি সেই আগের মতোই হবে নাকি শরীরের পরিবর্তন ঘটেছে। সে আগে যখন অঞ্জলী দিতে আসত কি অপরূপ সুন্দর লাগত তাকে। যখন শাড়ী পড়তো, চোখে কাজল লাগত, রজনীগন্ধার মালা দিয়ে খোঁপা বাঁধতো, তখন ওকে ফাল্গুনের শুক্লপঞ্চমীতে এক স্বরস্বতীর মতো লাগত ওকে। তাহলে কেন তাকে আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে ক্রমে অঞ্জলী শেষ হতে চলল। এদিকে পুরোহিত মশাই ডাকছে যারা বাকি রয়েছে তাদের অঞ্জলী দেওয়ার জন্য। শ্রুতি আসবেনা ভেবে নীলু বিষণ্ন বদনে মণ্ডপের দিকে এগোতে লাগল। হঠাৎ তার চোখে পড়লো ফুলের সাজি হাতে স্কুলের সেই চিরায়ত নীল পাড়ের সাদা শাড়ী পরে এক মহিলা স্কুলের গেট দিয়ে মণ্ডপের দিকে এগিয়ে আসছে। প্রথম দেখাতে চিনতে না পারলেও মণ্ডপের দিকে এগিয়ে আসতে তাকে চিনতে পারলো।
–‘এই তো শ্রুতি’।
এই আনন্দমুখর অনুষ্ঠানে কেন এমন শাড়ী পরে এসেছে। কোথায় গেল সেই ফুল দিয়ে খোঁপা বাঁধা, কোথায় গেল সেই চোখের কাজল কোনো কিছুই নেই শ্রুতির বদনে। এখন এসব কথা ভাবার সময় নয়, অনেকদিন পর দেখা হয়েছে আগে অঞ্জলী শেষ করি তারপর বাকি কথা। শ্রুতি কাছে আসতেই নীলু বলে উঠল —
–‘চল শ্রুতি আগে অঞ্জলী দিয়ে দিই’।
–‘হ্যাঁ,চল অনেক দেরি হয়ে গেল’।

দুজন একসঙ্গে অঞ্জলী দিল,দেওয়ার পর প্রসাদ খাওয়া শেষ করে একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে দুজনে মিলে গল্প করতে লাগল। নীলু যেই বলতে যাবে সেই কথাটি অমনি সেই সময় মা-মা চিৎকার করতে করতে এক বাচ্চা মেয়ে তাদের দিকে দৌড়ে আসছে। নীলু এদিক ওদিক তাকাল কাউকে দেখতে পেল না। সেইখানে কেবল তারা ছাড়া আর কেউ ছিলনা। বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে মনে হয় তিন বছরের বেশি হবে না। সেই মেয়েটি দৌড়ে এসে শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরল, শ্রুতি তাকে কোলে তুলে নিল। ততক্ষনে নীলু ভারাক্রান্ত মনে পরাজিত সৈনিকের মতো ফিরে আসছে। শ্রুতি যখন চোখ তুলে দেখে নীলু অনেকটা দূরে চলে গেছে। শ্রুতি ডাকল নীলুকে—
–‘নীলু শোন, দাঁড়া তুই, আমার উপহার টুকু নিয়ে যা’।
নীলু পিছন না ফিরে উত্তর দিল —
–‘না থাক, আমি উপহার পেয়ে গেছি’।

———-/—-সমাপ্ত———-/——

লেখা –২৬শা বৈশাখ ১৪২৬
অনলাইন পোস্ট –27/07/2019